কোরবানির গরুর নাম বিন লাদেন, সাদ্দাম, গাদ্দাফি!

Looks like you've blocked notifications!
দিনাজপুরের হিলির সৌখিন খামারি মাহফুজার রহমান বাবুর গরু বিন লাদেন। ছবি : এনটিভি

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দিনাজপুরের হিলিতে প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করে বিভিন্ন জাতের গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। এদের মধ্যে আবার বিন লাদেন, রাজা মশাই, সাদ্দাম ও গাদ্দাফির নামেও রাখা হয়েছে গরুর নাম। 

বিন লাদেনের দাম হাঁকা হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। তবে এই দামে কোনো ক্রেতা গরুটি কিনলে একটি ষাঁড় ফ্রি পাবেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সাড়া পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন গরুর মালিক। ফলে বিক্রি না হওয়ার শঙ্কায় দিন কাটছে তাঁর। করোনার কারণে শেষ পর্যন্ত এই অবস্থা চলতে থাকলে পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় দেখছেন না তিনি।

হিলি চারমাথা থেকে ছয় কিলোমিটার পূর্বে ছাতনী গ্রাম। গ্রামটি পেরিয়ে একটু সামনে গেলেই আশরাফ ফার্মস। স্থানীয় সৌখিন খামারি মাহফুজার রহমান বাবু এই খামারটি গড়ে তুলেছেন। নিজের নিবিড় পরিচর্যা আর মমতায় চার বছর ধরে তিনি গরুগুলো লালন-পালন করছেন।

দিনাজপুরের হিলির সৌখিন খামারি মাহফুজার রহমান বাবুর গরু সাদ্দাম। ছবি : এনটিভি

আজ সোমবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাহফুজুর রহমান বাবুর খামারের সাদা-কালো রঙের এই গরুর নাম রাখা হয়েছে বিন লাদেন। ফ্রিজিয়ান জাতের লাদেনের উচ্চতা পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি, লম্বায় সাড়ে ১১ ফুট। আর কালচে লাল রঙের পাকিস্তানি সিন্ধি জাতের গরুটির উচ্চতা ছয় ফুটের একটু ওপরে, লম্বা নয় ফুটের মতো। বিশ্বে ওসামা বিন লাদেনের সন্ত্রাসী হয়ে ওঠার গল্প এবং নিহতের খবর কার না জানা। কিন্তু গরুর নাম যে বিন লাদেন এটিই হয়তো এই প্রথম শোনা। প্রায় এক হাজার ২০০ কেজি ওজনের এই লাদেনের দাম হাঁকা হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। এটি যে ক্রেতা কিনবে তাকে একটি দেশীয় ষাঁড় বিনামূল্যে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছেন এই খামারি। 

শুধু লাদেন নয়, আলোচনায় উঠে এসেছে সাদ্দাম ও গাদ্দাফির কথাও। এসব বিশ্ব নেতার নাম অনুসারেও রাখা হয়েছে গরুর নাম। এই তিনটি গরুর দামও ধরা হয়েছে আট লাখ টাকা করে। বাবু তাঁর খামারে ফ্রিজিয়ান, ব্রাহাম, সিন্ধুসহ বিভিন্ন জাতের এই গরুগুলো লালন-পালন করছেন।

দিনাজপুরের হিলির সৌখিন খামারি মাহফুজার রহমান বাবুর গরু গাদ্দাফি। ছবি : এনটিভি

খামারি মাহফুজার রহমান বাবু বলেন, ‘চার বছর আগে আমার খামারের ফ্রিজিয়ান গাভী থেকে জন্ম নেয় সাদা-কালো এই বাছুরটি। এখন তার বয়স চার বছর। এর পরের বছর পাকিস্তানি সিন্ধি ও ব্রাহাম জাতের দুটি বাছুরও কেনা হয়। এরপর থেকেই সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতি ও প্রাকৃতিক খাবারের মাধ্যমে যত্ন সহকারে লালন-পালন করছি। সাদা-কালো রঙের ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টির নাম দিয়েছি বিন লাদেন। অন্যগুলো নাম দেওয়া হয়েছে রাজা মশাই, সাদ্দাম ও গাদ্দাফি। এই তিনটি গরুর ওজন বিন লাদেনের চেয়ে কম হলেও দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। এ পর্যন্ত তিনটি গরুর খাবারে ব্যয় হয়েছে প্রায় ছয় লাখ টাকা।’

‘করোনার কারণে ভালো দাম পাওয়া নিয়ে সংশয়ে আছি। আমার আশা সারা দেশের সবচেয়ে বেশি ওজনের গরুগুলোর মধ্যে বিন লাদেনও জায়গা করে নেবে।’

নিরাশ না হয়ে মাহফুজার রহমান বলেন, ‘বিন লাদেন, রাজা মশাই, সাদ্দাম, গাদ্দাফি (গরু) বিক্রির জন্য বিভিন্ন অনলাইন হাটে ছবি পাঠিয়েছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো সাড়া পাইনি। আশা করছি ঈদের বাকি সময়ের মধ্যেই সাড়া পাব। অনলাইনে বিক্রি করতে না পারলে ঢাকার বাজারে তোলা হবে গরুগুলো।’

দিনাজপুরের হিলির সৌখিন খামারি মাহফুজার রহমান বাবুর গরু রাজা মশাই। ছবি : এনটিভি

আশরাফ ফার্মসের শ্রমিকেরা জানান, খুবই শান্ত প্রকৃতির বিন লাদেন। অনেকে দেখতে এসে কাছে গেলেও তেড়ে আসে না। ভুষি, ডালি, ভুট্টা, খৈল, ঘাস ও খড় খাওয়ানো হয় গরুগুলোকে। আদর-যত্নে গরুগুলো বেড়ে উঠছে। বিন লাদেনের ওজন প্রায় এক হাজার ২০০ কেজি হবে। যা সাধারণ দেশি গরুর চেয়ে ১০ গুণ বেশি।

হাকিমপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. রতন কুমার ঘোষ বলেন, ‘আমরা সব সময় গরুগুলোর প্রতি নজর রাখি এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকি। সৌখিন খামারি মাহফুজার রহমান বাবু একেবারেই প্রাকৃতিক ও নির্ভেজাল পদ্ধতিতে ষাঁড়গুলোকে লালন-পালন করেছেন। দেখতেও দৃষ্টিনন্দন। তবে এবার কোরবানির ঈদে গরুর খামারিদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বাজারজাত করা। এই ধরনের বড় আকারের ষাঁড় সাধারণত ঢাকাসহ বাইরের ক্রেতারা কিনে থাকেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত খামারিরা কোনো সাড়া পাচ্ছেন না। আমরা চেষ্টাই আছি অনলাইনের মাধ্যমে আগ্রহী ক্রেতাদের কাছে পৌঁছাতে। খামারি তাঁর গরু ঢাকায় নিয়ে যেতে চাইলে ট্রেনের মাধ্যমে পাঠানোরও উদ্যোগ নেওয়া হবে।’