কোরবানির ৭ দিন সড়কে চামড়াবাহী আন্তঃজেলা যানবাহন চলাচল বন্ধ : বাণিজ্যমন্ত্রী
কোরবানির সাত দিন পর্যন্ত চামড়াবাহী আন্তঃজেলা যানবাহন চলাচল করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেছেন, ‘পশুর চামড়া যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য পশু কোরবানির পর প্রয়োজনীয় লবণ দিয়ে তা সংরক্ষণ করতে হবে।’
আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণ এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
টিপু মুনশি বলেন, ‘কোরবানির সাত দিন পর্যন্ত ঢাকা অভিমুখে এবং আন্তঃজেলা কোনো চামড়াবাহী যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। লবণ যুক্ত করার কারণে কোনো চামড়া নষ্ট হবে না এবং সময় নিয়ে উপযুক্ত মূল্যে চামড়া বিক্রি সম্ভব হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং চামড়ায় লবণ দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মসজিদগুলোতে এ বিষয়ে কোরবানিদাতাদের সচেতন করতে হবে। চামড়ার স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারদর, চাহিদা, সরবরাহ, রপ্তানির সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মতামত বিবেচনায় নিয়ে লবণযুক্ত চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকায় গরুর লবণযুক্ত চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪৭ থেকে ৫২ টাকা। গত বছর এটা ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। একই চামড়া ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর যা ছিল ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘এ ছাড়া সারা দেশে খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা, গত বছর যা ছিল ১৫ থেকে ১৭ টাকা। পাশাপাশি প্রতি বর্গফুট বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ থেকে ১৪ টাকা, গত বছর যা একই ছিল।’
‘এ চামড়ার মূল্য গরিবের হক। এতিমখানা, মাদ্রাসা, আনজুমান মফিদুল ইসলামের মতো সংস্থাগুলোই বেশিরভাগ চামড়া সংগ্রহ করে থাকে’ উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী গরিবদের ন্যায্য পাওনা নিশ্চিতের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী।
টিপু মুনশি বলেন, ‘চামড়া ক্রয় নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যাংক প্রয়োজনীয় টাকা ঋণ মঞ্জুর করেছে। দেশে প্রয়োজনীয় লবণ মজুত রয়েছে। লবণের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রয়েছে।’
‘হাটে কোরবানির পশুর হাসিলার সময় পশু ক্রেতাদের প্রয়োজনীয় লবণ ক্রয় নিশ্চিত করবে সিটি করপোরেশন’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এবার কোরবানির চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং নির্ধারিত মূল্যে কেনাবেচায় কোনো ধরনের সমস্যা হবে না এবং চামড়া নষ্ট হবে না।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের চামড়া রপ্তানি বেড়েছে, আরও বাড়বে। সরকার দেশের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওয়েট ব্লু চামড়া কেস টু কেস ভিত্তিতে রপ্তানির অনুমতি প্রদান করছে। এতোদিন কোরবানির নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় লবণযুক্ত না করার কারণে অনেক সময় নষ্ট হবার সম্ভাবনা থাকত এবং বিক্রেতা কম দামে চামড়া বিক্রয় করতে বাধ্য হতেন। এবারে চামড়ায় নির্ধারিত সময়ে এবং প্রয়োজনীয় লবণযুক্ত করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এখন আর কোনো চামড়া নষ্ট হবে না এবং বিক্রেতারা উপযুক্ত মূল্য পাবেন।’
বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘চামড়ার গুণগত মান নিশ্চিত করতে যথাযথভাবে চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে কোন চামড়া নষ্ট না হয়। সরকার এ বিষয়ে জনসাধারণকে সচেতন করার জন্য দেশের প্রচার মাধ্যমে টিভিসি প্রচার, লিফলেট বিতরণসহ পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ সভায় বক্তব্য রাখেন। ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে সভায় বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আকতার হোসেন, শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা, তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. মকবুল হোসেন, বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ, বাংলাদেশ ফিনিশ লেদার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন, হাইড অ্যান্ড স্কিন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব খান। এসময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্তকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।