কোল্ড স্টোরেজের আলু নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক

Looks like you've blocked notifications!
মুন্সীগঞ্জে কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষিত অর্ধেক আলু অবিক্রিত রয়ে গেছে। এরই মধ্যে কমছে দাম, শেষ হয়ে আসছে সংরক্ষণের মেয়াদ। এমন পরিস্থিতিতে সংরক্ষিত আলু নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা। ছবি : এনটিভি

রাজধানীর উপকণ্ঠ মুন্সীগঞ্জে কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষিত অর্ধেক আলু অবিক্রিত রয়ে গেছে। এরই মধ্যে দিন দিন কমছে আলুর দাম। বর্তমান বাজার দরে আলু বিক্রি করে লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচও উঠবে না তাদের।

এদিকে, কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণের মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে সংরক্ষিত আলু নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা। একই সঙ্গে হতাশায় ডুবছেন কোল্ড স্টোরেজের মালিকরাও। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ছয় উপজেলায় ৩৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষা করা হয়। এতে সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়। আর জেলায় সচল থাকা ৬৪টি কোল্ড স্টোরেজে আলু সংরক্ষণ করা হয় সাড়ে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন। 

জানা গেছে, বর্তমানে ৫০ কেজি ওজনের প্রতিবস্তা আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা। কোল্ড স্টোরেজের ভাড়া বাদ দিয়ে প্রতি কেজি আলুর দাম দাঁড়ায় ১৪ থেকে ১৫ টাকা। অথচ জমিতে রোপণ, কোল্ড স্টোরেজের ভাড়া, বস্তা কেনা ও কোল্ড স্টোরেজে যাতায়াত খরচ মিলিয়ে কেজিপ্রতি আলুর খরচ হয়েছে ১৮ টাকা থেকে ২০ টাকা। উৎপাদন খরচ পাওয়ার আশায় দীর্ঘদিন ধরেই আলু সংরক্ষণ করে রেখেছে কৃষক। আর  দিনে দিনে কমছে আলুর দাম। এতে কৃষকের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।  

জেলা সদরের চরাঞ্চলে চরকেওয়ার ইউনিয়নের এক কৃষক  বলেন, ‘গত বছর এক হাজার ৪০০ বস্তা আলু কোল্ড স্টোরেজে রেখে নয় লাখ টাকা লোকসান হইছিল। এবার ৮০০ বস্তা রাখছি। উৎপাদন ও কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ খরচ মিলে বস্তাপ্রতি আলুর দাম পড়ে গেছে ৯৫০ টাকা। কিন্তু, এখন আলুর বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। মনে হয় এবার আর আলু ক্ষেতি করতে পারমু না। আমরা আর আলু লাগামু না।’

সদর উপজলার শিলাই গ্রামের কৃষক মাহবুব হাসান সোহাগ বলেন, ‘সব জিনিসের দাম বাড়ছে। পাঁচ টাকার চা এখন ১০ টাকা হইছে। চিনি ১২০ টাকা কেজি। অথচ আলুর দাম দিন দিন কমছে। আবার এবার সারের দামও বাড়াইছে। আমরা আর আলু ক্ষেতি করমু না।’

জেলার টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রামের কম্বাইন্ড ফুড অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজের সহকারী ম্যানেজার হৃদয় ইসলাম জানান, এ কোল্ড স্টোরেজে এক লাখ ২০ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। সংরক্ষণ করা ৫৫ হাজার বস্তা আলু বিক্রি হলেও বাকি অর্ধেকের বেশি আলু অবিক্রিত রয়েছে। সংরক্ষণের জন্য বস্তাপ্রতি ভাড়া নিছি ২২০ টাকা। বর্তমানে আলুর দাম কম। তাই আলু বিক্রি করতে কৃষক কোল্ড স্টোরেজে আসছে না। 

একই উপজেলার বালিগাঁও গ্রামের ইউনুস কোল্ড স্টোরেজের  ম্যানেজার সফিউল আলম বলেন, ‘আগামী ৩০ নভম্বের আলু সংরক্ষণের সময় শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এখনও অর্ধেক আলু রয়ে গেছে। মনে হচ্ছে এবার সংরক্ষণ করা সব আলু বিক্রি হবে না।’ 

এদিকে, টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বাঘিয়া গ্রামের মদিনা কোল্ড স্টোরেজে আলু সংরক্ষণের ধারণ ক্ষমতা সাড়ে চার লাখ বস্তা। এ বছর কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করা হয় সাড়ে তিন লাখ বস্তা।

মদিনা কোল্ড স্টোরেজের  ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এ পর্যন্ত দুই লাখ ১৫ হাজার বস্তা আলু বিক্রি হয়েছে। বাকি আলু মদিনা কোল্ড স্টোরেজেই রয়ে গেছে।’

জেলার সিরাজদীখান উপজেলার সম্রাট মদিনা কোল্ড স্টোরেজে এক লাখ ৯০ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণ করা হয়। এ পর্যন্ত মাত্র ৬১ হাজার বস্তা আলু বিক্রি হয়েছে।

সম্রাট কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘কোল্ড স্টোরেজ বন্ধ হতে আর মাত্র এক মাস সময় বাকি আছে। এ স্বল্প সময়ের মধ্যে সংরক্ষিত বাকি আলু বিক্রির কোনো সম্ভাবনা নেই।’

জেলা সদরের মাকহাটি গ্রামের পঞ্চসার কোল্ড স্টোরেজের স্টোরকিপার আবু কাশেম বলেন, ‘আমাদের হিমাগারের ধারণ ক্ষমতা দুই লাখ ৮০ হাজার বস্তা। আলু রাখছিলাম এক লাখ ৮০ হাজার বস্তা। এক লাখ বস্তা বিক্রি হয়েছে। বাকি ৮০ হাজার বস্তা আলু রয়ে গেছে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরর উপপরিচালক মো. খুরশিদ আলম বলেন, ‘বাংলাদেশে আলুর চাহিদা ৮০ লাখ মেট্রিক টন। অথচ উৎপাদন হয়েছে এক কাটি ১০ লাখ মেট্রিক টন। বিদেশে আলু রপ্তানি করা যাচ্ছে না। প্রয়োজনের তুলনায় আলু উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম কমে যাচ্ছে। তাই আমরা কৃষকদের অন্যান্য ফসল উৎপাদনের পরামর্শ দিচ্ছি। মুন্সীগঞ্জ জেলার কৃষক বারবার আলু চাষ করে, আর লোকসান দেয়।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়শনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জের বেশিরভাগ কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করা আলু অবিক্রিত রয়েছে। বাজারে আলুর দাম নেই। দাম কমেছে। অন্যান্য শাকসবজির তুলনায় আলুর দাম কম। তাই কৃষক কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু নিতে আসছে না। কারণ ভাড়া দিয়ে চালান উঠবে না। একই সঙ্গে ব্যাপারীরাও আলু কিনতে আসছে না।’