খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল, চেয়েছেন দেশবাসীর দোয়া
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভালো আছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থাও স্থিতিশীল আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক দলের প্রধান অধ্যাপক ডা. এফ এম সিদ্দিকী। আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান চিকিৎসক।
ডা. এফ এম সিদ্দিকী বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল আছে। তিনি ভালো আছেন, স্বাভাবিক আছেন। এখন পর্যন্ত করোনায় তাঁর শারীরিক কোনো জটিলতা দেখা যায়নি।
খালেদা জিয়ার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেমন জানতে চাইলে চিকিৎসক বলেন, ‘ম্যাডামের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আজ পর্যন্ত যথেষ্ট ভালো আছে, আলহামদুলিল্লাহ। এভাবে এক সপ্তাহ গেলে বলা যাবে উনার শারীরিক অবস্থা শঙ্কামুক্ত।’
৪৮ ঘণ্টা পর পর খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ডা. এফ এম সিদ্দিকী।
আজ খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় বিদেশ থেকে কোনো চিকিৎসক ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন কিনা জানতে চাইলে ডা. এফ এম সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যুক্তরাজ্য থেকে চিকিৎসক যুক্ত ছিলেন। এ ছাড়া বেগম জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানও যুক্ত ছিলেন, তিনি সব কিছু তদারকি করছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হবে কিনা জানতে চাইলে চিকিৎসক বলেন, এখন পর্যন্ত তাঁকে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত। হাসপাতালে নেওয়ার পরিস্থিতি দেখা দিলে সে প্রস্তুতিও আমাদের আছে। আমরা সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।
ডা. এফ এম সিদ্দিকী জানান, খালেদা জিয়া দেশের সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, সবাই যেন সাবধানে থাকেন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন।
এ সময় এফ এম সিদ্দিকীর সঙ্গে ছিলেন খালেদা জিয়ার চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও ডা. আল মামুন।
এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ তাঁর বাসভবন ফিরোজায় থাকা মোট নয়জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল রোববার বিকেলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও তাঁর ভাগনে ডা. মামুন এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
ডা. মামুন বলেন, ‘ফিরোজায় খালেদা জিয়ারসহ তাঁর গৃহকর্মী ফাতেমা, প্রাইভেটকার চালক ও অন্যান্য কাজের লোকসহ মোট নয়জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। খালেদা জিয়া ছাড়া এঁরাই মূলত ওই বাসভবনে থাকেন। করোনায় আক্রান্তরা সবাই ওই বাসভবনে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। সেখানে চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওই বাসভবনে খালেদা জিয়ার কোনো স্বজন থাকেন না। ফলে কোনো স্বজন করোনায় আক্রান্ত হননি।’
ডা. মামুন আরও বলেন, ‘পাঁচ-ছয়দিন আগে প্রথমে ওই বাসভবনের একজন করোনায় আক্রান্ত হন। তারপর কেয়ারটেকারদের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হলে তাদেরও রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর গৃহকর্মীর (ফাতেমা) নমুনা পরীক্ষা করা হলে তাঁরও করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। তারপরই মূলত ম্যাডামের করোনার নমুনা পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শনিবার অন্যান্য শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সঙ্গে করোনার নমুনাও পরীক্ষা করা হয়। এতে তাঁর পজিটিভ রিপোর্ট আসে।’
‘আমরা খুবই সতর্কতার সহিত দেখভাল করছি সবাইকে। পুরো বাসভবনকে হাসপাতালের মতো করে রাখা হয়েছে। দুই-একজনের করোনার উপসর্গ থাকলেও ম্যাডামের কোনো উপসর্গ নেই। তিনি সুস্থ আছেন, ভালো আছেন। এখন পর্যন্ত তাঁর শারীরিক কোনো জটিলতা দেখা যায়নি। ফলে আমাদের আপাতত চিন্তা, বাসায় রেখে তাঁকে চিকিৎসা করানো। তবে রাজধানীর একটি হাসপাতালের একটি কেবিন আমরা ঠিক করে রেখেছি। সেখানে সব কথা-বার্তা বলে রেখেছি। যদি কোনো ধরনের শারীরিক জটিলতা তৈরি হয় তাহলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করাব।’ বলছিলেন ডা. মামুন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতের রায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে কারাবন্দি হন খালেদা জিয়া। তারপর নাজিমউদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে শুরু হয় তাঁর কারাজীবন। একই বছরের ৩০ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১০ বছরের আদেশ দেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ।
অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৫ নম্বর অস্থায়ী বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।