গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় এ সরকারের পতনের বিকল্প নেই : বিএনপি
খুলনার বিভাগীয় সমাবেশ থেকে বিএনপির নেতারা বলেছেন, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের বিকল্প নেই। ফয়সালা হবে রাজপথে। জনগণের বিজয় সুনিশ্চিত উল্লেখ করে নেতারা বলেন, সরকার বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থাসহ দেশের সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা গণতান্ত্রিক ও মূল্যবোধের এবং সাম্যের বাংলাদেশ ফেরত চাই। শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি নেতারা বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। নিজেরা বাঁচুন এবং দেশ ও জনগণকে রক্ষা করুন।
আজ শনিবার দুপুর ১টার দিকে খুলনায় বিএনপির গণসমাবেশ শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল ৫টায়।
শাসকদলের হামলা, পুলিশের গণগ্রেপ্তার ও বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে দলের নেতারা বলেন, খুলনা থেকেই সরকারের পরাজয় শুরু হলো। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অবৈধ শেখ হাসিনার সরকারের পতনের বিকল্প নেই।
আমাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই : মির্জা ফখরুল
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শেখ হাসিনাকে বলছি, পদত্যাগ করুন, নিরপেক্ষ সরকার দিন। আমাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই। আন্দোলন, আন্দোলন এবং আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ শেখ হাসিনা সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আপনারা (বিএনপি নেতাকর্মীরা) অসাধ্যকে সাধন করেছেন। তিন দিন ধরে জল-স্থল সবখানে গণপরিবহণ বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। গত দুদিন ধরে লঞ্চ বন্ধ করে দিয়েছে। তারপরও কি সরকার এই জনসমাবেশকে বাধা দিতে পেরেছে। ইতিহাস বলে, জনগণের ন্যায়সঙ্গত যে দাবি, তা হামলা করে দাবিয়ে রাখা যায় না।
তিনি বলেন, গত দুদিন ধরে ৫ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত করা হয়েছে। বিএনপির মিছিলে গুলি করা হয়েছে। ২০ জন গুলিবিদ্ধ। সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের নৌকা ডুবিয়ে দিয়ে কয়েকশ নেতাকর্মীকে আহত করা হয়েছে। গাজীর হাটে একজন নেতা পানিতে ডুবে গেছে। এখনও তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। আজকে নেতাকর্মীরা লড়াই করেই এখানে উপস্থিত হয়েছেন।
পুলিশের গুলিতে নিহত নেতাদের স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, গুলির সামনে, বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিয়েছে। কারণ তারা বাংলাদেশে গণতন্ত্র দেখতে চায়।
আরও দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে রাজপথে নামতে হবে : মোশাররফ
সরকার হটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, খুলনাবাসীকে বলতে চাই, আরও দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে রাজপথে নামতে হবে। যে দলের ইতিহাস গণতন্ত্র উদ্ধারের ইতিহাস, আওয়ামী লীগ সেই দলকে তো ভয় পাবেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমেরিকার সফরের প্রসঙ্গ টেনে মোশাররফ হোসেন বলেন, শেখ হাসিনার প্রায় ১৫ দিন আমেরিকায় ছিলেন প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা আমেরিকার আন্ডার সেন্ক্রটারির সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। অবৈধ শেখ হাসিনার সরকার হটানো ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই। জাতির কোনো বিকল্প নেই।
খালেদা জিয়ার মুক্তি শেখ হাসিনার কাছে ভিক্ষা চাই না : গয়েশ্বর
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ৯ দাবিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি শেখ হাসিনার কাছে ভিক্ষা চাই না। আজকে আমাদের এই আন্দোলন জনগণের আন্দোলন। খালেদা জিয়ার মুক্তি শেখ হাসিনাকে দিতে হবে না। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারলে খালেদা জিয়াকে কেউ কারাগারে রাখতে পারবে না
সরকারের সমালোচনা করে গয়েশ্বর বলেন, উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট এর জবাব দিতে হবে সরকারকে। পুলিশ চোর পাহারা দেওয়ার জন্য। চোর ধরার জন্য পুলিশ সন্ত্রাস পাহারা দেওয়ার জন্য নয়, সন্ত্রাস ধরার জন্য।
খুলনায় আ.লীগের শোচনীয় পরাজয় : ড. মঈন খান
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, খুলনায় আওয়ামী লীগের শোচনীয় পরাজয় হয়েছে। সরকারি দলের হামলা, পুলিশের গণগ্রেপ্তার, যানবাহন বন্ধ ও সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পরও লাখ লাখ লোকের সমাগম ঘটিয়ে আজকের গণসমাবেশ সফল করে খুলনার মানুষ বীরত্বের পরিচয় দিয়েছে।
ড. আবদুল মঈন খান আরও বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা আটকে রেখেছে। এ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসায় জনগণের ওপর সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে আর এর মাশুল দিচ্ছে জনগণ।
বাধা দিয়েও লোকসমাগম ঠেকাতে পারেনি সরকার : দুদু
বিএনপির খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশে লোকসমাগম ঠেকাতে সরকার শত বাধা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেও সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, আজকের এ গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার খুলনাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে মূলত জনগণ থেকে আওয়ামী লীগকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। শত বাধা, হামলা, গ্রেপ্তার ও হয়রানি মোকাবিলা করে গণসমাবেশে লাখ লাখ লোকের সমাগম প্রমাণ করেছে, সরকারের পায়ের তলার মাটি সরে গেছে।
শামসুজ্জামান দুদু আরও বলেন, গত তিন দিন থেকেই প্রচণ্ড বিরোধিতা ও হামলাসহ নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। কাউকে কাউকে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। আমাদের দলের নেতাকর্মীদের বাধা দিতে আওয়ামী লীগের দলীয় যুব সংগঠনের সঙ্গে পুলিশের ভূমিকাও ছিল ন্যক্কারজনক। সড়কপথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। লঞ্চ ও ফেরি বন্ধ করা হয়েছে। তারপরও সরকার জনস্রোত ঠেকাতে পারেনি।
মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে : আব্দুল আউয়াল মিন্টু
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেছেন, বর্তমান সরকারের চরিত্র হলো দুর্নীতির। এরা স্বপ্ন দেখানোর নাম করে দেশকে লুটেপুটে খেয়েছে। উন্নয়নের নাম করে মানুষের অধিকার হরণ করে লুটপাট করছে। দেশকে বাঁচাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে জিয়াউর রহমান। বাংলাদেশকে এ দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। সরকারের পতন ঘটিয়ে মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
খুলনায় জনস্রোত সৃষ্টি হয়েছে : নিতাই রায় চৌধুরী
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী বলেছেন, খুলনায় বিএনপির সমাবেশে বাধা দিয়েও জনস্রোত ঠেকাতে পারেনি। সমাবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে সরকারের পেটুয়া বাহিনী ও পুলিশ। কিন্তু লাভ হয়নি। খুলনা বিভাগের প্রান্তরে প্রান্তরে জনস্রোত সৃষ্টি হয়েছে।
জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাবে : এ্যানি
বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, শেখ হাসিনা অবৈধ প্রধানমন্ত্রী। অবৈধভাবে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছে। এ সরকার ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। আয়নাঘর করে মানুষকে গুম করেছে। আয়নাঘর বন্ধ করে দিতে হবে। পার্লামেন্ট ভেঙে দাও, সরকারের পতন ঘটাও। জনগণ জেগে উঠেছে। জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটাবে।