গণপরিবহণে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, দুর্ভোগে রাজধানীবাসী
নজিরবিহীন মূল্যস্ফীতির মধ্যে রাজধানীর গণপরিবহণে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। মানা হচ্ছে না জ্বালানির দাম বৃদ্ধির পর সরকারের বেঁধে দেওয়া ভাড়ার চার্ট। এতে ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। চালকের সহকারীর সঙ্গে প্রায়ই জড়াতে দেখা যাচ্ছে বাকবিতণ্ডায়। যদিও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কথা অস্বীকার করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি। আর বিআরটিএ বলছে, যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে দেওয়া হবে মামলা, করা হবে জরিমানা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) গত ৬ আগস্ট রাজধানীর বাস মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে আগের প্রতি কিলোমিটারে দুই টাকা ১৫ পয়সা থেকে ৩৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে আড়াই টাকা আদায়ের অনুমতি দেয়।
জান্নাতুল ফেরদৌস নামের একজন সরকারি কর্মকর্তা জানান, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে পল্টন পর্যন্ত ‘গ্রিন ঢাকা’ নামের একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে ভাড়া হিসেবে তাঁকে বর্তমানে ১০০ টাকা দিতে হচ্ছে। আগে এর ভাড়া ছিল ৬০ টাকা।
বিআরটিএর বেঁধে দেওয়া ভাড়া হিসাবে ‘গ্রিন ঢাকা’ নামের বাসটির ভাড়া বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক রকম বেশি। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রধান গেট থেকে পল্টন পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। গ্রিন ঢাকা যদি বিআরটিএর নির্দেশনা অনুসরণ করত, তাহলে জান্নাতুলের দৈনিক বাসের ভাড়া মাত্র তিন টাকা ৫০ পয়সা বাড়ত। যা বর্তমানে অতিরিক্ত আদায়কৃত ৪০ টাকার প্রায় দশগুণ কম।
গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সরকার। ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ৩৪ টাকা বেড়ে ১১৪ টাকা, অকটেন ৪৬ টাকা বেড়ে ১৩৫ টাকা এবং পেট্রোলের দাম ৪৪ টাকা বেড়ে ১৩০ টাকা হয়েছে। তবে, অনেক যাত্রী দাবি করেছেন যে, সাম্প্রতিক জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বাসের মালিকরা নির্ধারিত ভাড়াবৃদ্ধির চেয়েও বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
মুন্না নামে একজন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘মিরপুর ১১-১২ থেকে শাহবাগ পর্যন্ত বিকল্প পরিবহণ নামে একটি বাসে ১১ কিলোমিটার যাতায়াতের জন্য আগে ৪০ টাকা নিত। এখন সেখানে ৫৫ টাকা ভাড়া দিচ্ছি।’অপর যাত্রী ফারুক বলেন, ‘আমরা জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি।’বাসচালক ও তাদের সহকারীরা অবশ্য বলেছেন, তারা শুধু তাদের মালিকের নির্দেশ পালন করছেন।
রাইদা বাসের চালক রুহুল আমিন বলেন, ‘আমাদের মালিক তার নির্দেশ অনুযায়ী ভাড়া না আদায় করলে বাসের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে আমরা অসহায়।’বিআরটিএ বিভিন্ন রুটে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পরও বাস অপারেটররা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় অব্যাহত রেখেছে।বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির (জেকেএস) সভাপতি মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিআরটিএ শুধুমাত্র একটি রুটে অভিযান পরিচালনা করে। তাই বাস মালিকরা নির্বিঘ্নে যাত্রীদের লুট করে চলেছে।’
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘আমরা প্রতিটি বাস মালিককে বিআরটিএর নির্দেশনা অনুযায়ী ভাড়া আদায়ের নির্দেশনা দিয়েছি।’বিআরটিএর চেয়াম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ‘কোনও গণপরিবহণ মালিক যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে তার বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানা করা হবে।’
সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, ‘বিআরটিএ কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নিতে পারবে না বলে এরই মধ্যে বাস মালিকদের সতর্ক করা হয়েছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’