গণমাধ্যমকর্মী বিল : সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবে সংসদীয় কমিটি
গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলি) বিল-২০২২ পর্যালোচনার আগে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু আজ জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
গত ২৮ মার্চ সংসদে বিলটি উত্থাপন করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। পরে বিলটি ৬০দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। বিলটি পরীক্ষার জন্য সংসদীয় কমিটি আরও ৬০ দিন সময় বৃদ্ধির আবেদন করে।
বিলটি সংসদে ওঠার পর এ নিয়ে কোনো বৈঠক করেনি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। তবে এর অনেকগুলো ধারা নিয়ে বিরোধিতা করেছে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনসহ মালিকদের সংগঠন।
হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘সাংবাদিক নেতারা আমার সঙ্গে বিলটি নিয়ে কথা বলেছিলেন। আমরা তাদের লিখিত প্রস্তাব দিতে বলেছি। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে কমিটির বৈঠকে তাদের আমন্ত্রণ জানাব।'
ইনু জানান, সংসদীয় কমিটি সাংবাদিকদের ট্রেড ইউনিয়ন বিএফইউজে, ডিইউজে, টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাটকো, সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াব এবং সংবাদপত্রের কর্মচারীদের সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করবে। এছাড়া ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সঙ্গেও বৈঠক হতে পারে বলে জানান তিনি।
সংসদে উত্থাপিত বিলে বলা হয়েছে, কেনো গণমাধ্যমকর্মীর বেতনকাল এক মাসের বেশি হবে না। পরবর্তী মাসের সাত কর্মদিনের মধ্যে বেতন পরিশোধ করতে হবে।
এতে বলা হয়, গণমাধ্যমকর্মীদের ন্যূনতম ওয়েজ বোর্ড প্রতি পাঁচ বছর পর পর গঠন হবে। ওয়েজ বোর্ড সংবাদপত্র, সংবাদ সংস্থা, বেসরকারি টেলিভিশন, বেতার ও নিবন্ধিত অনলাইন মাধ্যমের জন্য প্রয়োজনে পৃথক পৃথক বেতন কাঠামো নির্ধারণ করবে।
আগে শুধু সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার জন্য এই ওয়েজ বোর্ড গঠন করা হতো।
প্রস্তাবিত আইনটিতে বলা আছে, গণমাধ্যমে পূর্ণকালীন কর্মরত সাংবাদিক, কর্মচারী এবং নিবন্ধিত সংবাদপত্রের মালিকানাধীন ছাপাখানাসহ নিবন্ধিত অনলাইন গণমাধ্যমে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত কর্মীদের ‘গণমাধ্যমকর্মী’ বলা হবে।
গণমাধ্যমকর্মীদের তিনটি বিভাগ করা হয়েছে এই বিলে। সেগুলো হলো- অস্থায়ী বা সাময়িক, শিক্ষানবিশ ও স্থায়ী।
বিলে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমকর্মীকে সপ্তাহে অন্যূন ৪৮ ঘণ্টা কাজ করতে হবে। এর বেশি কাজ করালে অধিকাল (ওভার টাইম) ভাতা দিতে হবে।
আগে গণমাধ্যমকর্মীরা চলতেন ‘দ্য নিউজপেপার এমপ্লয়িজ (চাকরির শর্তাবলী) আইন- ১৯৭৪’ এর আওতায়। এর সঙ্গে শ্রম আইনের কিছু বিষয় সাংঘর্ষিক হচ্ছিল।
পরে সাংবাদিকদেরকে শ্রম আইনের আওতায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাদের শ্রমিক হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। এই বিল পাস হলে গণমাধ্যমকর্মীরা আর শ্রমিক হিসেবে গণ্য হবেন না, তাদের গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে অভিহিত করা হবে।
দ্য নিউজপেপার এমপ্লয়িজ (চাকরির শর্তাবলী) আইনে সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক ও প্রেস কর্মচারীদের চাকরির শর্ত, আর্থিক বিষয় ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ করা ছিল।
সরকার ওই আইনকে রহিত করে সব শ্রমিকের জন্য ২০০৬ সালে ‘শ্রম আইন’ প্রণয়ন করে, যাতে সংবাদপত্রের সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক ও প্রেস কর্মচারীদের বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১৮ সালে বিলটির নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।