গণস্বাস্থ্যের কিট নিতে আসেনি সরকার! ‘পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ’
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) পরীক্ষার জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র যে কিট আবিষ্কার করেছে, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার জন্য সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে চেয়েছিল। এজন্য বেসরকারি সংস্থাটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেসব প্রতিষ্ঠান কিট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আসেনি। বরং তাদের পক্ষ থেকে সংস্থাটিকে বলা হয়েছে, তারা যেন এসব কিট নিজ উদ্যোগে সরকারির এসব প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেয়।
দেশের প্রখ্যাত অনুজীব বিজ্ঞানী ও গণবিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে একটি দল করোনাভাইরাস পরীক্ষার এই কিট আবিষ্কার করে। দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই কিট পাঁচ মিনিটের মধ্যে পরীক্ষার ফলাফল দিতে সক্ষম।
আজ শনিবার বেলা ১১টায় ধানমণ্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের ‘গেরিলা কমান্ডার মেজর এ টি এম হায়দার বীর উত্তম মিলনায়তনে‘ কিট হস্তান্তর অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ মোট ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানে উপস্থিত ছিল কেবল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার্স ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) একটি প্রতিনিধিদল।
পরে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা বিএসএমএমইউ এবং সিডিসির প্রতিনিধিদের কাছে এই কিট হস্তান্তর করেন বলে বিকেলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. ফরহাদ এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, কিট উদ্ভাবনের প্রধান গবেষক গণবিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীল, গবেষণা দলের সমন্বয়কারী ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকারসহ অন্য গবেষকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মো. ফরহাদ বলেন, ‘‘করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য আমরা কিট প্রস্তুত করেছি। এখন সরকার আমাদের চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে আমরা পরীক্ষার কাজ শুরু করতে পারব। সেজন্য আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়ে কিট হস্তান্তরের বিষয়টি জানিয়েছিলাম। কিন্তু সরকারের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই আসেনি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে। পরে ওই সব প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করা হলে তারা কিটগুলো ‘যদি সম্ভব হয়‘ তাহলে পাঠিয়ে দিতে অনুরোধ জানিয়েছেন।’’
ফলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামীকাল রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর), আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআরবি) কাছে এই কিট হস্তান্তর করবে। তারপর তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন। সব ঠিকঠাক থাকলে এবং সরকার অনুমতি দিলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কিটের ব্যবহার শুরু করবে।
এদিকে বিকেলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কিট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের প্রতিনিধি উপস্থিত না হওয়ায় আগামীকাল তাদের কাছে এ কিট পৌঁছে দেওয়া হবে। এ ছাড়া বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে কিট পরীক্ষা ও মতামতের জন্য নমুনা প্রদান করা হবে।
কিট হস্তান্তরের সময় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আশা করছি, সরকার এই কিট যাচাই-বাছাই করে খুব দ্রুত অনুমোদন দেবে। এবং অনুমোদন প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে আমরা উৎপাদন শুরু করব। পর্যায়ক্রমে এক লাখ কিট দেওয়া সম্ভব হবে।’
প্রস্তুত করা কিট পরীক্ষায় সফল দাবি করে গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীল বলেন, ‘এন্টিবডি ও এন্টিজেন এ দুটির সমন্বয় করে কিট তৈরি করা হয়েছে। এটি পাঁচ মিনিটের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে করোনা রোগী শনাক্ত করতে সম্ভব।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, গণস্বাস্থ্য-আরএনএ বায়োটেক লিমিটেড যৌথ উদ্যোগে এই কিট উদ্ভাবন করে। ২০০৩ সালে যখন সার্স ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল তখন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল সিঙ্গাপুর গবেষণাগারে কয়েকজন সহকারীকে নিয়ে সার্স ভাইরাস দ্রুত নির্ণয়ের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।
ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে অন্য গবেষকরা হলেন- ড. ফিরোজ আহমেদ, ড. নিহাদ আদনান, ড. মো. রাইদ জমিরুদ্দিন ও ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার।