গরিবের কসাইখানায় ১০ টাকায় গরুর মাংস!

Looks like you've blocked notifications!
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিক্রমপুর মানবসেবা ফাউন্ডেশন ‘গরিবের কসাইখানা’ নামে এক কেজি গরুর মাংস ১০ টাকায় বিক্রি করছে। ছবি : এনটিভি

এক কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়! সাথে বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে এক কেজি পোলাও চাল ও মাংসের মসলা। ঈদের দিন এমনি এক বাজারের দেখা মিলে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলায়। ঈদের আনন্দকে ভাগ করে নিতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিক্রমপুর মানবসেবা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ‘গরিবের কসাইখানা’ নামের ব্যতিক্রমী এই ঈদ বাজারের আয়োজন করা হয়।

ঈদের দিন মঙ্গলবার সকাল ১০টায় উপজেলার কামারখাড়া স্কুল মাঠে ১০ টাকার বিনিময়ে নিম্ন আয়ের তিন শতাধিক পরিবার ১ কেজি গরুর মাংস, ১ কেজি পোলাও চাল ও মাংসের মসলা কিনে নেন। এমনি আয়োজনে হাসি ফুটে অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষের মুখে। এর আগে রমজানের শুরুতে ১০ টাকায় ইফতার বাজার আয়োজন করে সংগঠনটি। এ নিয়ে ১০ টাকার বাজার থেকে ৫১৩টি পরিবার বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী ক্রয় করেন।

জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার হাইয়ারপাড় গ্রামের শেফালি বেগম (৩৫) বলেন, ‘বাজারে অনেকগুলো গরু জবাই করছে। তা দেখে ছোট পোলায় বায়না ধরছে ঈদে গরুর মাংস খাবে। তিনদিন ধরে পোলারে বুঝাইতাছি, আজ না কাল। কিন্তু গরুর মাংস তো সাড়ে ছয়শ টাকা কেজি, কেমনে আনবো। ঈদের দিন পোলায় মন খারাপ করবো। সেই চিন্তায় ঘুম আসে না। কিন্তু আল্লাহ ছোট বাচ্চাটার মনের ইচ্ছে পূরণ করছে। তাই তো হঠাৎ করে এতো কম টাকা দিয়ে গরুর মাংস কিনলাম। এই দামে তো আমার বাপ-দাদারাও কিনে নাই।’

কামারখাড়া এলাকার জয়মালা বেগম (৬৫) বলেন, ‘কুরবানির ঈদ ছাড়া গরুর মাংস দেখি না। কুরবানি আইলে মানুষ গরুর মাংস দেয়। বছরের ওই ঈদেই শুধু গরুর মাংস খাই। রোজার ঈদে গরুর মাংস আর পোলাও চাল খাইতে পারমু তা কখনই ভাবতে পারি নাই। এর আগেও এখান থেকে ১০ টাকায় ইফতারির তেল-খেজুরসহ ৭-৮ প্রকার খাওন কিনে নিছি।’

শিলই গ্রামে মারফত আলী (৬০) বলেন, ‘বুড়ো বয়সে বাজারে পাহারাদারের কাজ করি। মাস শেষে ৫ হাজার টাকা পাই। তা দিয়ে কোনো মতে সংসার চলে। ঈদে যে বাজার করবো দিন শেষে সেই টাকাও নাই। অভাবের সংসারে বাজার থেকে গরুর মাংস কিনবো যা ভাবতেও ভয় লাগে। গতকাল বাজারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গরু জবাই করা দেখলাম। মনে চায় একটু মাংস দিয়ে ভাত খাই। কিন্তু সাহসে কুলায় না। রাতে যখন জানতে পারি, এখানে ১০ টাকায় গরুর মাংস দিবো, তখনই নিয়ত করছি, যেভাবেই হোক মাংস কিনবো। তাই ঈদের নামাজ পড়ে দেরি করি নাই। সাথে সাথে চলে আসছি এখানে। এখন মাংস পেয়ে ঈদের আনন্দ ডাবল হয়ে গেছে আমার।’

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিক্রমপুর মানবসেবা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রিয়াদ হোসাইন বলেন, ‘ঈদের দিন তিনশতাধিক পরিবারের আনন্দকে দ্বিগুণ করতে পেরে আমরা আনন্দিত। সংগঠনের সদস্যদের মাসিক চাঁদা ও অনুদান দিয়ে আমাদের এই ছোট আয়োজন। তবে আমাদের পরিকল্পনা আরও বড় ছিল। আর্থিক সংকটের কারণে যা পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। আমরা প্রত্যাশা করি আগামীতে সকলের সহযোগিতায় আরও বেশি সংখ্যক পরিবারের পাশে থাকতে পারবো।’

বিক্রমপুর মানবসেবা ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক হিরা বলেন, ‘বাজারে মাংসের দাম ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। যা সমাজের নিম্নআয়ের মানুষের পক্ষে কেনা সম্ভব নয়। তাই আমরা তাদের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগ করে নিতে এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছি। ঈদের দিন আয়োজন করার মূল লক্ষ্য ছিল, বিত্তবানদের মতো তারা যেন ঈদের দিন বাজার থেকে মাংস কেনার অনুভূতি লাভ করেন। তাদের মুখে তৃপ্তির হাসি দেখে এরকম আয়োজন করতে আমাদের আরও উৎসাহ যোগায়।’