গিনেজ ওয়ার্ল্ড বুকে নাম লেখালেন ভৈরবের মনিরুল

Looks like you've blocked notifications!

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় মো. মনিরুল ইসলাম শাওন। তিনি এক হাতের উপর ৩০ সেকেন্ডে সর্বোচ্চ ৫০টি পেন্সিল রেখে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ডে নাম লেখালেন। এমন রেকর্ড করায় পরিবার, আত্মীয়স্বজনসহ এলাকাবাসী আজ আনন্দিত।

 

উপজেলার কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের মিরারচর গ্রামের বাসিন্দা মনিরুল। কাতার প্রবাসী মো. জহিরুল ইসলাম ও গৃহিণী খাইরুন নাহারের ছেলে তিনি। এ দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে মনিরুল বড়। তিনি ময়মনসিংহ কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সম্মান প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। ছাত্র হিসেবেও মনিরুল বেশ মেধাবী। পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসিতে তিনি ‘এ প্লাস’ পেয়েছেন।

মনিরুল জানান, ইউটিউব ও সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতার বিষয়টি দেখে বিভিন্ন বিষয়ে চর্চা শুরু করেন। এরমধ্যে হাতে পেন্সিল রাখার বিষয়টি চর্চার মাধ্যমে তিনি আয়ত্ত করেন। এই বিষয়ের আগের রেকর্ড তিনি ভাঙতে পারবেন বলে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। গিনেজ বুক কর্তৃপক্ষ তাকে ভিডিও পাঠাতে বলে। চলতি বছরের গত জুন মাসে ভিডিও পাঠান মনিরুল। অবশেষে গত ২১ সেপ্টেম্বর ই-মেইলে চিঠি পাঠিয়ে এই স্বীকৃতির কথা জানায় তারা। সেই সঙ্গে এই বিশ্বরেকর্ড অর্জনের স্বীকৃতির প্রাথমিক সনদপত্রের একটি কপিও পাঠায় তারা। মূল সনদপত্র ডাকযোগে পাঠাতে মাসখানেক সময় লাগতে পারে বলেও জানানো হয়েছে।

এর আগে গিনেজ ওয়ার্ল্ড বুকে ইতালির নাগরিক সিলভা ৩০ সেকেন্ডে ৪২টি পেনসিল হাতের উপর রাখার কৃতিত্ব অর্জন করেন। তার সেই রেকর্ড ভেঙেছিলেন ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী সিয়াম। সিয়াম ৩০ সেকেন্ডে ৪৪টি পেনসিল হাতের উপর রেখে এ রেকর্ড ভাঙেন। সিয়ামের সেই রেকর্ড ভেঙে ৩০ সেকেন্ডে ৫০টি পেনসিল হাতের উপর রেখে মনিরুল ইসলাম গিনেজ ওয়ার্ল্ড বুকে নাম লিখিয়েছেন।

এ বিষয়ে মনিরুল জানান, পড়ালেখার পাশাপাশি ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন রেকর্ড দেখে তার মনেও ইচ্ছে জাগে যদি তিনিও একটি রেকর্ড গড়তে পারতেন। যদি গিনেজ বুকে নিজ দেশের নামটা তুলে ধরতে পারতেন। সেই প্রচেষ্টায় বিশ্বের অনেক রের্কড দেখে তাদের মধ্য থেকে তিনি বেছে নেন ৩০ সেকেন্ডে সর্বোচ্চ পেনসিল হাতের উপর রাখার রেকর্ডটি। সেই রেকর্ড করার জন্য তিনি দীর্ঘদিন প্রস্তুতি নেন। পরে সেটি তার আয়ত্তে চলে আসে। তখন তিনি আগের রেকর্ডটি ভাঙার জন্য গিনেজ বুকে তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করেন।

মনিরুল আরও জানান, তিনি আরও কয়েকটি বিষয় নিয়ে চর্চা করছেন। তাঁর ধারণা, সেসব বিষয়েও তিনি সফল হবেন এবং রেকর্ড গড়ে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনবেন।

ভাতিজার এই অর্জনে বেশ আনন্দিত মনিরুলের চাচা মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমার ভাতিজা মনিরুল এই রেকর্ড গড়ে শুধু আমাদের পরিবারকে গর্বিত করেনি, বরং ভৈরব তথা সমগ্র দেশকে সম্মানিত করেছে। তিনি তাঁর ভাতিজার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করেন।

মামা মো. মিলাদ হোসেন অপু জানান, ফেসবুক, ইউটিউব, গিনেজবুক এসব নিয়ে মনিরুলের মেতে থাকায় বিরক্ত হতেন। কিন্তু আজ মনিরুল তাদের দেখিয়ে দিয়েছেন কোনো সাধনাই বিফলে যায় না। তিনি তাঁর ভাগ্নের আর বড় সাফল্য কামনা করেন।

মনিরুলের ছোট বোন ইসরাত জাহান জানান, পড়ালেখার সময়টা ছাড়া সারাক্ষণ তাঁর ভাই এসব বিষয়ে ব্যস্ত থাকেন। অনেক সময় ভাইয়ের সঙ্গে বসে একটু গল্প করার সুযোগও হয়নি। এতে বেশ রাগ হতো তাঁর। এমন অর্জনের পর তাঁর আর কোনো রাগ নেই ভাইয়ের ওপর।

গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ডে নাম লেখানোর ঘটনায় কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে মনিরুলকে সম্মাননা দেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।

কালিকাপ্রসাদ ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফারুক মিয়া জানান, তাঁর ইউনিয়নের একটি ছেলে এমন সম্মান বয়ে এনেছেন শুনে তিনি খুবই আনন্দিত। তিনি ইউপির পক্ষ থেকে মনিরুলকে সংবর্ধনা জানাবেন। যাতে মনিরুলের পাশাপাশি অন্য শিক্ষার্থীরাও উৎসাহিত হয় এমন সৃষ্টিশীল কাজে।

ইউএনও লুবনা ফারজানা জানান, তিনি বিভিন্ন পত্রপত্রিকার সংবাদের মাধ্যমে ইতোমধ্যে মনিরুলের গিনেজ বুক রেকর্ড গড়ার বিষয়ে জেনেছেন। ভৈরব তথা দেশের জন্য এমন সম্মান অর্জন করায় তিনি মনিরুলের জন্য শুভ কামনা জানান। পাশাপাশি অন্যরাও যাতে এমন কাজে মনোনিবেশ করে সেই আহ্বান জানান। তিনি মনিরুলকে ডেকে এনে অভিনন্দন জানাবেন বলেও জানান।