গোপালগঞ্জে নির্বাচনি সহিংসতা

গুলিতে আহত যুবকের মৃত্যু, খোয়া যাওয়া ৩ ইভিএম উদ্ধার

Looks like you've blocked notifications!
গোপালগঞ্জের লতিফপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতায় গুলিতে আহত হয়ে মারা যাওয়া ইয়াসিন শেখের স্বজনদের আহাজারি। ছবি : এনটিভি

গোপালগঞ্জের লতিফপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতায় গুলিতে আহত যুবক ইয়াসিন শেখ মারা গেছেন। আজ মঙ্গলবার (২১ মার্চ) ভোরে ঢাকার বিএনকে বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।

আজ সন্ধ্যা ৬টায় তাঁর মৃতদেহ গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার চরমানিকদাহ গ্রামে এসে পৌঁছে। এ সময় সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

ইয়াসিনের মরদেহবাহী গাড়ি যখন গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছায়—তখন মা-বাবা, স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, আত্মীয়স্বজনের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।

‘কেন যে নির্বাচন কেন্দ্রের মাঠে সে গেল, আর এভাবে সবাইকে ছেড়ে অল্প বয়সে চলে গেল’—এমন কথা বলে স্বজনদের কান্না থামছিল না।

মা-বাবা ছাড়াও ইয়সিন স্ত্রী ও দুই সন্তান রেখে গেছেন। দরিদ্র ঘরের খেটে খাওয়া একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা তাঁর পরিবার। আগামী দিনে কীভাবে তাঁর সন্তান বড় হবে—সেই চিন্তায় দিশেহারা তাঁর স্ত্রী।

এদিকে, গতকাল সোমবার সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে এলাকা পুরুষ শূন্য। গ্রেপ্তার এড়াতে গা-ঢাকা দিয়েছে তারা। কারণ এ ঘটনায় পুলিশের দুই মামলায় ৩৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় এক হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ এলাকায় পাহারা বসিয়েছে—যাতে আবারও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।

মরদেহের ব্যাপারে এখনও নিহত ইয়াসিনের পরিবার বা পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সদর থানার ওসি জানিয়েছেন, লতিফপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে নির্বাচনের ফলাফল বাতিলের দাবিতে পরাজিত তিন প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশ কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৫ সদস্য আহত হন। এ সময় সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও তাঁর গাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

ওসি আরও জানান, এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার উপপরিদর্শক (এসআই) গণেশ বিশ্বাস বাদী হয়ে চরমানিকদাহ গ্রামের ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।  অপরদিকে, ইভিএম ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৫নং ওয়ার্ডের চরমানিকদাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. সেলিম তালুকদার বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এ মামলায় আসামি করা হয়েছে ওই ওয়ার্ডের পরাজিত সদস্য পদপ্রার্থী সোহাগ মোল্যা পলু, ইব্রাহিম কাজী, মতিয়ার রহমান ফকিরকে। রাতেই ইব্রাহিম কাজীসহ  দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার সদর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডে নির্বাচনি ফলাফল বাতিলের দাবিতে পরাজিত তিন সদস্য (মেম্বার) পদপ্রার্থীর সমর্থকরা নির্বাচনি মালামাল আটকে দেয়। পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এতে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাবেদ মাসুদ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৫ সদস্যসহ আহত হন অন্তত ৩০ জন। এ সময় ইয়াসিন শেখ ও তাঁর মেজভাই কালাম শেখসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ কালাম ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এদিকে সংঘর্ষের সময় খোয়া যাওয়া তিনটি ইভিএম মেশিনের একটি ওই এলাকার পরিত্যক্ত বাগান থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে অপর দুটি ইভিএম মেশিনও মধুমতী নদীর তীর থেকে উদ্ধার করা হয়।