গোপালগঞ্জে সাতজনের দেহে ভারতীয় ধরন শনাক্ত
গোপালগঞ্জে সাতজনের শরীরে করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত করা হয়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) বরাত দিয়ে গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ আজ শনিবার সকালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।
ডা. সুজাত আহমেদ জানান, এই ধরন (ভারতীয় ধরন) দ্রুত ছড়ায়, তাই বৌলতলী, সাতপাড় ইউনিয়নে আজ শনিবার থেকে আরও সাত দিনের কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সিভিল সার্জন আরও জানান, ভারতীয় ভ্যারিয়্যান্টে আক্রান্ত সন্দেহে গত ২৮ মে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য ১১টি নমুনা আইইডিসিআরে পাঠায়। এর মধ্যে সাতজনের দেহে করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়েছে।
এদিকে, গোপালগঞ্জে আশঙ্কাজনক হারে কারোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় সদর উপজেলার সাতপাড়, সাহাপুর ও বৌলতলী ইউনিয়নে ২৮ মে থেকে সাত দিনের কঠোর লকডাউন দেয় স্থানীয় প্রশাসন। গত বৃহস্পতিবার আরও দুদিনের জন্য লকডাউন বৃদ্ধি করা হয়। তবে সাহাপুরে সংক্রমণ না থাকায় ওই ইউনিয়ন থেকে লকডাউন প্রত্যাহার করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন মাস্ক ব্যবহার, স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এসব এলাকায় মোবাইল কোর্ট অব্যাহত থাকবে। আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ১০ জন চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়া সংক্রমণ কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে, তা আমরা জানার চেষ্টা করব। পাশাপাশি আমরা সংক্রমণ কমানোর জন্য চেষ্টা করব।’
গোপালগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. এস এম সাকিবুর রহমান জানান, সদর উপজেলার বৌলতলী ইউনিয়নের তেলিভিটা গ্রামের হলধর কীর্ত্তনীয়ার ছেলে বিভাষ কীর্ত্তনীয়া করোনার উপসর্গ নিয়ে গত ২১ মে মারা যান। পরে ওই পরিবারের আরও তিনজন করোনায় আক্রান্ত হন। বিভাষের সংস্পর্শে আসা ওই গ্রামের ১৮৪ জনের নমুনা দফায় দফায় সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর ৪৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে তাদের মধ্যে ১১ জনের নমুনা আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। সেখানে সাতজনের দেহে করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়েছে।
ডা. সাকিবুর রহমান আরও বলেন, ‘বৌলতলী, সাহাপুর ও সাতপাড় এলাকার মানুষ বৈধ ও অবৈধ পথে ভারত যাতায়াত করে থাকেন। বৈধ পথে যাতায়াতকারীদের তথ্য আমাদের কাছে আছে। কিন্তু অবৈধ পথে যাতায়াতকারীদের তথ্য আমাদের কাছে নেই। অবৈধভাবে ভারতে যাওয়া ব্যক্তিরা সব সময় তথ্য গোপন করেন। এ কারণে আক্রান্তদের মধ্যে ভারতীয় ধরন থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। সেই আশঙ্কাই সত্য হয়েছে।’
সংক্রমণ প্রতিরোধে সাতপাড় ও বৌলতলী ইউনিয়নের সব হাট-বাজার লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ওই এলাকার মানুষের নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এ পর্যন্ত তেলিভিটা গ্রামসহ ওই তিন ইউনিয়নে মাত্র ৫০ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। সাহাপুর ইউনিয়নে তেমন সংক্রমণ নেই। আক্রান্তরা বাড়িতেই হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। তেলিভিটা গ্রামের সঙ্গে আশপাশের সব গ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। মধুমতি নদী পারাপারের খেয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অতি প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষকে ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
ডা. সাকিবুর আরও বলেন, এ পর্যন্ত গোপালগঞ্জে করোনায় তিন হাজার ৯৪৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে।