চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪

Looks like you've blocked notifications!
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় মূলহোতাসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র‍্যাব। রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগে আসামি ধরতে পুলিশ শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে চবির শাহ আমানত হলে অভিযান চালিয়েছে। তবে, কাউকে আটক করতে পারেনি তারা। পরে আজ শনিবার র‍্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় মূলহোতাসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র‌্যাব-৭-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ এ তথ্য জানান।

গ্রেপ্তার চার জন হলেন—মো. আজিম (২৩), মো. নুর হোসেন শাওন (২২), মো. নুরুল আবছার বাবু (২২) ও মো. মাসুদ রানা মাসুদ (২২)। তাঁদের কাছ থেকে ওই ছাত্রীর মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে

এর আগে শুক্রবার রাত ৯টা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশন চত্বরে নানা কর্মসূচি পালন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

গত বুধবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে দোষীদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে নামেন চবির বিভিন্ন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।

র‍্যাব বলছে, ভুক্তভোগী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী গত রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে তাঁর বন্ধুকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকা হয়ে প্রীতিলতা হল সংলগ্ন রাস্তায় যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে রাত সোয়া ১০টার দিকে পাঁচ জন তাঁদের পথরোধ করে জেরা করতে থাকে এবং অহেতুক মারধর করে। তখন ভুক্তভোগী বাধা দিলে তারা এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি, লাথি মেরে তাঁদের আহত করে। মারধরের একপর্যায়ে তারা ওই ছাত্রী ও তাঁর বন্ধুকে জোর করে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের পেছনে ইটের রাস্তা দিয়ে ঝোপঝাড়ের দিকে মারধর করতে করতে নিয়ে যায় এবং জিজ্ঞেস করে, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সেশনে এবং কোন বিভাগে পড়াশোনা করেন। মারধরের একপর্যায়ে তারা ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানি এবং ভিডিও ধারণ করে। তাদের একজন হুমকি দেয় যে, তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক না করলে ধারণ করা ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়া হবে। ওই ব্যক্তিরা অবৈধভাবে এক ঘণ্টা আটক করে ওই ছাত্রী ও তাঁর বন্ধুর দুটি মোবাইল ফোন ও ১৩ হাজার ৭০০ টাকা আত্মসাৎ করে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী বাদী হয়ে গত বুধবার চট্টগ্রামের হাটহাজারী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।

র‍্যাব আরও জানায়, ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হওয়ার কারণে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। মামলাটি রুজু হওয়ার পর থেকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তার করার জন্য র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামে গোয়েন্দা নজরদারি এবং ব্যাপক তৎপরতা অব্যাহত রাখে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শুক্রবার রাতে র‌্যাব-৭-এর একটি আভিযানিক দল হাটহাজারী ও রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত আসামি মো. আজিম, মো. নুর হোসেন শাওন, মো. নুরুল আবছার বাবু ও মো. মাসুদ রানা মাসুদকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। পরে উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে আসামিরা এ ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে।

পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আসামিদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে র‍্যাব।

এদিকে, এ যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে চার দিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।

এ ঘটনায় এরই মধ্যে চবি প্রশাসন পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এদিকে, চবি ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেলকে এ ঘটনায় তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি।