চাঁদপুরের ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ, লোডশেডিংয়ে নাভিশ্বাস
চাঁদপুর শহর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকদিন ধরে বিদ্যুতের লোডশেডিং চলছে। মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে চাঁদপুর জেলাবাসীর নাভিশ্বাস দশা। গত রোববার থেকে চাঁদপুর শহরে অস্বাভাবিক হারে পালাক্রমে বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং হচ্ছে। একেক দফায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি গরম বাড়ায় বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে শহরবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। অফিস, ব্যাংক-বীমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছে না লোকজন।
এদিকে চাঁদপুর শহরে অবস্থিত ১৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে। যদিও ডাকাতিয়ার অপর প্রান্তে ইচলী এলাকার ‘চাঁদপুর পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড’ নামের বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে অল্প পরিসরে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।
তবে গ্যাস সংকট দূর হলে সহসাই বিদ্যুৎ উৎপন্ন শুরু হবে বলে জানিয়েছেন চাঁদপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদ্যুৎ সংকট এতটা প্রকট হয়নি চাঁদপুরে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চাহিদার ৬০-৭০ ভাগ সরবরাহ পেলেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি পাচ্ছে অর্ধেকের মতো। গত তিন দিন ধরে বিদ্যুতের এই ঘনঘন আসা-যাওয়া লক্ষ্য করা গেলেও সহসা এই সমস্যা থেকে উত্তরণের কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেনি স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ।
চাঁদপুর শহরের মাদ্রসা রোড এলাকার শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার বলেন, ‘দুদিন ধরে ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাচ্ছে। এতে করে আমাদের পড়াশোনা চরম ব্যাহত হচ্ছে। একদিকে প্রচণ্ড গরম, অন্যদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় ঘরে বসে থাকাও যাচ্ছে না। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর সময় বিদ্যুৎ মোটেও থাকে না। আমরা এই বিদ্যুত সমস্যা নিরসন চাই।’
শহরের নাজিরপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী মামুন তালুকদার বলেন, ‘বিদ্যুৎ সমস্যাটা এমনভাবে হচ্ছে একবার বিদ্যুৎ গেলে ২-৩ ঘণ্টার মধ্যেও আসে না। আমাদের যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে, তা বিদ্যুৎ ছাড়া কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয় না। অনেকই বিদ্যুৎ না থাকায় ফিরে যাচ্ছেন। বিশেষ করে বাসা বাড়িতে বয়স্ক ও ছোট শিশুদের বেশি সমস্যা হচ্ছে। একবার বিদ্যুৎ গেলে তাদেরকে ঘরে রাখা কষ্ট হচ্ছে। এত ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়ার ফলে প্রাতিষ্ঠানিক ও পারিবারিক মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে।’
চাঁদপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিদ্যুতের উৎপাদনগত সমস্যার কারণে সারা দেশে বিদ্যুৎস্বল্পতা আছে। চাঁদপুরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় যে অঞ্চল রয়েছে, সেখানে প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা দিনের বেলা ১৮ মেগাওয়াট ও রাতে ২২ মেগাওয়াট। জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ কম পাওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে লোডশেডিং হচ্ছে। এতে করে দিনে ১২ মেগাওয়াট আর রাতে ১৪ মেগাওয়াট দেওয়া হচ্ছে।’
প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘চাহিদানুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় আমাদের লোডশেডিং করে সামাল দিতে হচ্ছে। গ্যাসের সমস্যা নিরস না হওয়া পর্যন্ত এমন অবস্থা থাকবে। আশা করি গ্যাসের সমস্যা সহসাই কেটে যাবে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’

শরীফুল ইসলাম, চাঁদপুর