চা শ্রমিকদের মজুরি ২০১৯ সালেই বৃদ্ধি করা উচিত ছিল : গবেষক আশ্রাফুল

Looks like you've blocked notifications!
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আশ্রাফুল করিম। ছবি : সংগৃহীত

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী চা শ্রমিকদের কৃত্য নাট্য, সংস্কৃতি, ভাষা, সংগীত ও আর্থসামাজিক বিষয়াবলী গবেষক এবং সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আশ্রাফুল করিম বলেছেন, চা শ্রমিকদের মজুরি ২০১৯ সালেই বৃদ্ধি করা উচিত ছিল। তিনি বলেন, চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে মালিক পক্ষ বলে থাকে, তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। কিন্তু ২০১৯ সালে বাংলাদেশে চায়ের বাম্পার ফলন ফলন হয়েছিল। ওই সময় সাত কোটি ৭০ লাখ কেজি টার্গেট ধরা হলেও চায়ের উৎপাদন হয়েছিল ৯ কোটি ৬০ লাখ কেজি। সেই সময় থেকেই মালিক পক্ষের উচিৎ ছিল মজুরি বৃদ্ধি করা।

সাম্প্রতিক সময়ে চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে আন্দোলন প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক আশ্রাফুল এসব কথা বলেন।

ড. আশ্রাফুল বলেন, ‘আমি ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত চা শ্রমিকদের ভাষা, সংস্কৃতি, আর্থ-সামাজিক অবস্থা এসব নিয়ে গবেষণা ও গবেষণা রিলেটেড কাজ করছি। চা শ্রমিকদের দাবি আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয়। এর বড় কারণ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে ১২০ টাকা মজুরিতে একবেলা আহারও জোটার কথা না।’

চা শ্রমিকদের বৈষম্যের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক আশ্রাফুল করিম বলেন, ‘আমি মনে করি, চা শ্রমিকরা আমাদেরই লোক। তবে, চা শ্রমিকদের আমরা মন থেকে আমাদের লোক হিসেবে গ্রহণ করতে পারছি না। তারা যেহেতু চা বাগান এলাকায় থাকে, আমরা তাদের থেকে দূরে থাকতে চাই। অনেকেই চা শ্রমিকদের মনে করে ভারতের অধিবাসী। তারা যখন ১৮৫৪ সালে আমাদের দেশে আসে, তখন বাংলাদেশ নামে কোনো দেশ ছিল না। তখন সবাই আমরা ভারতবর্ষের নাগরিক ছিলাম।’

অধ্যাপক আশ্রাফুল আরও বলেন, ‘আমরা যে যে পর্যায় আছি, দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সকলেই আমরা অবদান রাখছি। চা শ্রমিকেরা চা উৎপাদনের মাধ্যমেও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অবদান রাখছে। একজন কৃষি শ্রমিক সকাল বেলা কাজ শুরু করলে দুপুর পর্যন্ত একরোজ শেষ। আবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত আরেকটি পর্ব থাকে। সাধারণ শ্রমিকেরা যেখানে ৮ ঘণ্টা কাজ করে সেখানে একজন চা শ্রমিকের কর্মঘণ্টা ১২ ঘণ্টা (ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত)। কিন্তু, এই শ্রমের বিনিময়ে সঠিক প্রাপ্তিটা নিশ্চিত হচ্ছে না।’

মুক্তিযুদ্ধেও চা শ্রমিকদের অবদানের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক আশ্রাফুল করিম বলেন, ‘১৯৭১ সালে অন্যান্য আপামর জনতার মতো তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। দেশের চা বাগানগুলোতে অনেক সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছে। ৬০৩ জন চা শ্রমিক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন।’

আশ্রফুল বলেন, ‘যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অবদান রাখছে তাদের অবশ্যই ন্যায্য মজুরি হওয়া উচিৎ। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান চা বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালে এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে চা শিল্পের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অবদান হলো চা শ্রমিকদের স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ। এই অবদানের কথা চা শ্রমিকরা আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। এ ছাড়া তিনি চা ফলন বৃদ্ধির লক্ষ্যে উচ্চফলনশীল বীজ উদ্ভাবনের সক্ষমতা অর্জনের পদক্ষেপ গ্রহণ, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর মালিকানাবিহীন ও পরিত্যক্ত চা বাগানগুলোর পুনর্বাসনের নির্দেশনা, চা গবেষণা স্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউটে রূপান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ, চা শ্রমিকদের বিনামূল্যে বাসস্থানের ব্যবস্থা, রেশন, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের উদ্যোগও গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু, পরবর্তীতে এর ধারাবাহিকতা আর রক্ষিত হয়নি।’