চুয়াডাঙ্গায় ফের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, ৪২.৮ ডিগ্রিতে অতিষ্ঠ জনজীবন

Looks like you've blocked notifications!
ইউএনবিতে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে নেওয়া ছবি

চৈত্রের দাবদাহের মতো এই বৈশাখের গরমেও অতিষ্ঠ জনজীবন। দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে প্রকৃতি পুড়ছে গ্রীষ্মের দাপদাহে। মৃদু থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে হাঁপিয়ে উঠেছে খেটে খাওয়া মানুষ। এদিকে, চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ বা সর্বোচ্চ কাছাকাছি থাকছে। আজ সেখানে ৪২ দশমিক দুই ডিগ্রি ছিল।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, আজ বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১২ শতাংশ।

রাকিবুল হাসান বলেন, ‘এ পরিস্থিতি থাকবে আরও কয়েকদিন। যদিও কোথাও কোথাও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ অঞ্চলে ২৩-২৪ এপ্রিলের আগে তেমন সম্ভাবনা নেই।’

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোমিনপুর বাজারের ভ্যানচালক লিপু মিয়া বলেন, ‘ব্যাটারি চালিত ভ্যান চালাতে কষ্ট নেই, কষ্ট এ রোদে পায়ে চালিয়ে যাত্রী নিয়ে যেতে। এদিকে, বেশি গরমের কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হয় না, এ জন্য আয় রোজগার কমে গেছে।’

চুয়াডাঙ্গা আলী হোসেন মার্কেটের ইলেকট্রনিক মিস্ত্রি শিলন আলী বলেন, ‘গরমে নাভিশ্বাস অবস্থা। মার্কেটে প্রচুর গরম থাকায় দিনের বেলা অনেকটা ফাঁকা থাকছে। তবে, ঈদের কারণে জুতা-কাপড়ের দোকানে ভিড় আছে।’

দিনমজুর সামসুল বলেন, ‘এতো তাপদাহ সহ্য করা কঠিন। জমিতে বেশিক্ষণ কাজ করতে পারলাম না। এখন এই ছায়ায় বসে আছি। আজ কাজ শেষ করতে দেরি হবে।’

রাস্তার পাশে বসে বেল ও কলা বিক্রেতা মুনছুর আলী বলেন, ‘কোনো বিক্রি নেই। কলা-বেল নিয়ে গাছের নিচে শুয়ে-বসে কাটাচ্ছি। এভাবে চললে সংসার চালানোই দায় হয়ে যাবে।’

তরমুজ ও ডাব বিক্রেতা শামীম হোসেন বলেন, ‘এতো গরম, তারপরও দিনের বেলায় তেমন বিক্রি নেই। ইফতারির আগমুহূর্তে বিক্রি বাড়বে। কিন্তু, এই দাবদাহে দোকানে বসে থাকায় কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

বেসরকারি চাকরিজীবী রত্না মালিক জানান, ‘অফিস ছুটি বাড়িতে আছি। তবে, কেনাকাটা করতে বের হতে পারছি না। সৃষ্টিকর্তা দ্রুত আবহাওয়া স্বাভাবিক করুক, সেই প্রার্থনা করছি।’

চুয়াডাঙ্গা শহরের আপন ফ্যাশনের মালিক শাকিল বলেন, ‘আমরা নিজেরাই দোকানে এই তাপমাত্রায় দোকানে বসতে পারছি না, কাস্টমার কেমনে আসবে। ঈদের কেনাকাটায় ভাটা পড়েছে।’

ব্যাটারি চালিত রিকশা চালক লিয়াকত বলেন, ‘গরমের কারণে দিনের বেলায় তেমন ভাড়া পাচ্ছি না। আর সন্ধ্যার পরও রোজার কারণে ভাড়া নেই। সামনে ঈদ কি যে করব, ভাবছি।’

এদিকে,  ১৮দিন ধরে প্রচণ্ড তাপে পুড়ছে এই জেলা। একদিকে খরতাপে হাঁসফাঁস, আরেকদিকে ঘনঘন লোডশেডিং। স্মরণকালের এমন গরমে বিপর্যস্ত তাই জনজীবন। হাঁসফাঁস করছে পশুপাখিও। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না অনেকেই। 

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, গত ২ এপ্রিল ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়। যা ছিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত টানা তীব্র দাবদাহের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে জেলাটি।

গত ৩ এপ্রিল  ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৪ এপ্রিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৫ এপ্রিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৬ এপ্রিল ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৭ এপ্রিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৮ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৯ এপ্রিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১০ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ১১ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১২ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৩ এপ্রিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৪ এপ্রিল ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ১৫ এপ্রিল ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৬ এপ্রিল ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৭ এপ্রিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ১৮ এপ্রিল অর্থাৎ গত মঙ্গলবার ৪০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গতকাল বুধবার ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

এ ছাড়া আজ বৃহস্পতিবারও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এ জেলায় রেকর্ড করা হয়েছে।

এমন তাপে কোথাও কোথাও রাস্তার পিচ গলে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। চুয়াডাঙ্গা সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘শহরের কিছু স্থানে রাস্তার পিচ গলে যাওয়ার খবর পাচ্ছি। তবে, এতে যান চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। তবে পিচ বেশি গলে গেলে খোয়াগুলো নরম হয়ে চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে।’ 

প্রকাশ চন্দ্র আরও বলেন, ‘রাস্তায় অনেক সময় ছোট ছোট ছিদ্র হয়ে যায়। পিচ গলে গেলে যান চলাচল করলে সেই ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এতে পানি ঢুকতে পারে না। আমরা বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে দেখছি। তেমন পর্যায়ে গেলে বা কেউ জানালে আমরা মেরামত করব।’

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আওলিয়ার রহমান বলেন, ‘অতি প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাইরে বের না হতেও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রোজাদারদের সন্ধ্যার পর থেকে বেশি বেশি পানি ও ফলমূল খেতে বলা হচ্ছে। শিশু, কিশোর ও যারা রোজা থাকছে না, তাদেরকে ঘনঘন পানি ও শরবত পান করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তীব্র তাপদাহে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। তাই যতটা সম্ভব ঠাণ্ডস্থানে থাকতে হবে।’

চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলার সব স্থানে মাইকিং করে জনসাধারণকে সতর্ক করা হচ্ছে, তারা যেন অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হয়। সন্ধার পর শরবত, পানি ও ফলমূল বেশি করে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘স্ট্রোক, ডায়রিয়াসহ গরমজনিত রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষ ব্যবস্থা করার জন্য সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এই তাপমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানো হচ্ছে। তাদের সহায়তা করা হচ্ছে।’