ছদ্মবেশে পালিয়ে থেকেও রক্ষা পেলেন না দুর্ধর্ষ মানিক

Looks like you've blocked notifications!
দুই খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত মানিক মিয়া। ছবি : এনটিভি

শ্রমিকের ছদ্মবেশে পালিয়ে থেকেও রক্ষা পেলেন না দুটি খুনের আসামি মানিক মিয়া (৪৪)। তিনি গাজীপুর ও ময়মনসিংহের দুইটি হত্যা মামলার আসামি। আজ বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মালেকেরবাড়ি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১।

গ্রেপ্তারকৃত মানিক মিয়া ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার আমোদপুর গ্রামের বাসিন্দা।

র‌্যাব সূত্র জানায়, মানিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ২০১৪ সালের ২৭ জুলাই ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার আমোদপুর গ্রামের শফিকুল ইসলামের সঙ্গে টাকা-পয়সার লেনদেন নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয় মানিক মিয়ার। একপর্যায়ে শফিকুলকে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে ধানক্ষেতের কাঁদামাটির মধ্যে চুবিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় নান্দাইল থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। ঘটনার পর থেকে মানিক মিয়া আত্মগোপনে ছিলেন।

অপরদিকে, ২০১৯ সালের ১৯ মে অটোরিকশার সিরিয়াল নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পশ্চিম ধীরাশ্রম এলাকায় সাজু আহাম্মদের (২৩) সঙ্গে মানিক মিয়ার ঝগড়া হয়। ঝগড়ার পরে মানিক মিয়া পরের দিন রাতে সাজু আহম্মদকে গাজীপুর মহানগরীর ডেমোরপাড়া এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে নৃশংসভাবে সাজুকে খুন করে লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায় মানিক। এমন অভিযোগ এনে পুবাইল থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়। মানিক মিয়া ওই মামলার একমাত্র এজাহারনামীয় আসামি।

এ ঘটনার পর থেকে মানিক মিয়া কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানার কনকাপোত এলাকায় দিনমজুরের কাজ করে আত্মগোপনে থাকেন।

র‌্যাব আরও জানায়, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নান্দাইল থানা পুলিশ র‌্যাব-১-এর কাছে আইনগত সাহায্য কামনা করে। এর প্রেক্ষিতে র‌্যাব ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতকে গ্রেপ্তারে ছায়া তদন্ত শুরু করে।

এক পর্যায়ে আজ ভোররাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুর মহানগরীর মালেকেরবাড়ী এলাকা থেকে মানিক মিয়াকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই দুই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন গ্রেপ্তারকৃত মানিক।

র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মানিক মিয়া জানিয়েছে, ময়মনসিংহের একই গ্রামের প্রতিবেশী শফিকুল ইসলাম ও মানিক মিয়া এলাকায় সিঁধেল চুরি, ডাকাতি ও গরু চুরির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এসব টাকার ভাগ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এর জের ধরে ২০১৪ সালের ২৭ জুলাই শফিকুলকে স্থানীয় আমোদপুর এলাকার সালাম ডাক্তারের বাড়ির পাশে ডেকে নিয়ে হত্যা করে। পরে তিনি ময়মনসিংহ থেকে গাজীপুরে পালিয়ে যান। এখানে দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে বাসাভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। নিজের বেশভুষা পরিবর্তন করে অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকেন।

পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১৯ মে গাজীপুর মহানগরীর পশ্চিম ধীরাশ্রম রেলগেইট অটোস্ট্যান্ডে সাজু আহম্মেদ অটোতে যাত্রী নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় অটোরিকশার সিরিয়াল নিয়ে সাজুর সঙ্গে মানিক মিয়ার বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সাজুকে মারধর করে আহত করে মানিক। এ ঘটনায় এলাকার সালিশে মানিক মিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ মানিক এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে সাজুকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সাজুকে পূর্বপরিকল্পিত স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য ১০ হাজার টাকায় লোক ভাড়া করে মানিক। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই ভাড়াটে পরদিন সকালে বনমালা যাওয়ার কথা বলে সাজুর অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন এলাকা ঘুরতে থাকে। দুপুর আড়াইটার দিকে সাজুকে স্থানীয় ডেমোরপাড়া বিলের নিচু জমিতে নিয়ে যায় ওই ভাড়াটে। সেখানে কৌশলে জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে সাজুকে অজ্ঞান করে। পরে মানিক মিয়া অচেতন সাজুকে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে খুন করে পালিয়ে যায়। এরপর তিনি বারবার অবস্থান পরিবর্তন করে আত্মগোপনে থাকেন।

র‌্যাব আরও জানায়, মানিক মিয়া চুরি, ডাকাতি এবং পেশাদার হত্যাকারী হিসেবে এলাকায় ব্যাপক কুখ্যাতি রয়েছে। বিভিন্ন থানায় তাঁর নামে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তাকে নান্দাইল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।