ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মানসিকভাবেও সৎ হতে হবে
বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে মুজিব আদর্শের ওপর ভিত্তি করে। ছাত্রলীগ যেহেতু সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংগঠন এবং অলাভজনক একটি সংগঠন, সুতরাং এখানে শুধু বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ব্যক্তি থাকতে হবে। তাঁকে মানসিকভাবেও সৎ হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এনটিভি অনলাইনকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
যশোরের মণিরামপুর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন লেখক ভট্টাচার্য। বাবা দেবাশীষ ভট্টাচার্য। লেখক মণিরামপুরের গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ২০০৮-০৯ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ বিভাগে ভর্তি হন। বর্তমানে তিনি এই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করছেন।
রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য লেখক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই রাজনীতি শুরু করেন। তিনি জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এর পর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে দায়িত্ব পান ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের (শোভন-রাব্বানী কমিটি)। শোভন ও রাব্বানী মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন। তখন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করেন লেখক ভট্টাচার্যকে। পরে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এনটিভি অনলাইন বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ বিশেষ সাক্ষাৎকারের চতুর্থ পর্বে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন এনটিভি অনলাইনের স্টাফ করেসপনডেন্ট ফখরুল শাহীন ।
এনটিভি অনলাইন : মুজিব বর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আজকের এই দিনে দাঁড়িয়ে একজন ছাত্রনেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
লেখক ভট্টাচার্য : আমরা যারা আওয়ামী রাজনীতি করি, তারা বঙ্গবন্ধুর একজন আদর্শ হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। সেক্ষেত্রে আমরা একজন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কর্মী হিসেবে বলতে পারি বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ দুটি শব্দ একেবারেই অভিন্ন। এই বাংলাদেশের সৃষ্টির ইতিহাসের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু যেভাবে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত এবং একক সিদ্ধান্তের ফলেই পরবর্তী স্বার্থকতা হিসেবে একটি স্বাধীন এবং সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্র পেয়েছি। সুতরাং বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশকে বিশ্লেষণ করতে গেলে একই প্লাটফর্মে এসে সেটা মিলিত হবে।
এনটিভি অনলাইন : বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছেন সেটা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
লেখক ভট্টাচার্য : এই ভূখণ্ডকে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের হাত থেকে মুক্ত করার পর কিন্তু মাত্র তিন-চার মাসের মাথায় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছেন। বঙ্গবন্ধু সে স্বপ্নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জাতির পিতার যে খুনি তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। তাছাড়া যারা যুদ্ধাপরাধী এবং স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত ছিল, তাদেরও ফাঁসির দড়িতে ঝুলাতে পেরেছি। এই আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করতে না দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে স্বাধীনতাবিরোধীরা। সেটা সামরিক ক্যু থেকে শুরু করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। এমন কি নিজেদের মধ্যেও কোন্দল সৃষ্টি করতে তখন একটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিল যে আমরা রক্তের উত্তরসূরির বদলে আদর্শের উত্তরাধিকারী খুঁজতে চাই। দলীয় কোন্দল তারা সৃষ্টি করেছিল কিন্তু আজকের দিনে এই ২০২১ সালে মুজিববর্ষে দাঁড়িয়ে আমরা দৃঢ় চিত্তে বলতে পারি যে রক্তের উত্তরাধিকার কিন্তু প্রকৃত আদর্শের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতে পারে সেটা প্রমাণিত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর রক্ত যে শরীরে প্রবাহিত হচ্ছে সেই রক্তের নেতৃত্বই কিন্তু জাতি চায়, তা প্রমাণিত। আমরা তরুণসমাজ এবং ছাত্রসমাজ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ বা স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য ইতোমধ্যেই একটার পর একটা ধাপ অতিক্রম করে চলেছি।
এনটিভি অনলাইন : একজন পরিচ্ছন্ন ও মেধাবী রাজনীতিবিদের জন্য কী কী গুণাবলী থাকা প্রয়োজন?
লেখক ভট্টাচার্য : আসলে প্রথমেই আমাদের একজন রাজনৈতিক কর্মী চিন্তা করার আগে বা একজনের রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচিতে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগে, বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস জানা দরকার। বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে মুজিব আদর্শের ওপর ভিত্তি করে। ছাত্রলীগ যেহেতু সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংগঠন এবং অলাভজনক একটি সংগঠন, সুতরাং এখানে শুধু বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ব্যক্তি থাকতে হবে। তাঁকে মানসিকভাবেও সৎ হতে হবে।
এনটিভি অনলাইন : একজন তরুণ রাজনীতিবিদ হিসেবে দেশকে কোথায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন?
লেখক ভট্টাচার্য : কিভাবে দেশ পরিচালনা হবে, বাংলাদেশ সৃষ্টির মহানায়ক (বঙ্গবন্ধু) তাঁর লেখা ও জীবনীর মাধ্যমে সেগুলো বর্ণনা করেছেন। আমি মনে করি তাঁর সেই স্বপ্ন যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলেই কিন্তু আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে আমরা পৌঁছাতে পারব। তাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নই আমাদের এই দেশ পরিচালনার স্বপ্ন হিসেবে মনে করি।
এনটিভি অনলাইন : সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখছি ভাস্কর্য নিয়ে বিভিন্ন লোক বিভিন্ন সময়ে মন্তব্য করছে, এ বিষয়টাকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
লেখক ভট্টাচার্য: বাঙালির মাথায় বাঙালির মস্তিষ্কে এই অসাম্প্রদায়িক চেতনার বীজমন্ত্র কিন্তু জাতির পিতাই দিয়ে গেছেন। পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি এই অসাম্প্রদায়িক সম্পর্কে গ্রামগঞ্জের তৃণমূল মানুষ সম্পূর্ণ জ্ঞান যখন অর্জন করেছিল, তখন বাংলাদেশের মানুষ এই প্লাটফর্মকে কেন্দ্র করে ঐক্যবদ্ধ হয়েছ। আমাদের স্বাধীনতার জন্যও কিন্তু সাম্প্রদায়িক চেতনার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতা যখন পেয়েছি তখন আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আবার আঘাত আসার কথা ছিল না। কিন্তু পাকিস্তানের রেখে যাওয়া দালাল যারা যুদ্ধাপরাধী সাম্প্রদায়িক চেতনাকে নিয়ে আবার রাজনীতি শুরু করেছে। ধর্মীয় চেতনাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে। তারা ঘাপটি মেরে বসে থাকে, যখন বড় কোনো ইস্যু হয়, আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশে কোনো সুনাম হয়, তখনই তারা এ ধরনের সাম্প্রদায়িক কাজ করে থাকে।
আপনারা দেখবেন বাংলাদেশের মানুষ যখন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়, যখন দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পরিচালিত হয় তখনই কিন্তু তারা তাদের এজেন্ডা সাম্প্রদায়িক সেই বীজবাষ্প মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। তাই আমাদের সবাইকে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে যাতে বাংলাদেশকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারি।
এনটিভি অনলাইন : আপনার এই পথচলার কোনো রোমাঞ্চকর বা সুখকর স্মৃতি?
লেখক ভট্টাচার্য: আসলে আমার সুখকর স্মৃতি বলতে যখন দেশরত্ন শেখ হাসিনার সান্নিধ্যে আসতে পেরেছি, সেটাই ছিল সুখকর এবং রোমাঞ্চকর মুহূর্ত। আমাদের সবারই প্রত্যাশা থাকে দেশরত্নের সামনে দাঁড়িয়ে শুধু আমাদের নিজেদের নাম-পরিচয় দিয়ে যেন বলতে পারি আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মী, আপনার পিতার আদর্শের একজন ক্ষুদ্রতম কর্মী, আপনার একজন ক্ষুদ্রতম কর্মী, এটা বলতে পারাই আমাদের জীবনের বড় প্রাপ্তি। আমরা যখন ভারপ্রাপ্ত হই তখন নেত্রীকে সালাম করার যেই মুহূর্তটা সেটা আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমরা যে জাতির পিতাকে সব সময় বুকে ধারণ করে এসেছি, জাতির পিতার ধমনিতে যে রক্ত প্রবাহমান ছিল, সেই রক্ত, শেখ হাসিনার চরণকে আমরা স্পর্শ করতে পেরেছি, সেটাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।