ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে লালন স্মরণোৎসব শেষ হচ্ছে আজ

Looks like you've blocked notifications!
দৌলপূর্ণিমা উপলক্ষ্যে লালনের ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে ভক্তরা। ছবি : এনটিভি

দোলপূর্ণিমা উপলক্ষ্যে লালনের ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে চলা তিন দিনের লালন স্মরণোৎসব শেষ হচ্ছে আজ। আনুষ্ঠানিক ভাবে আজ রাতে উৎসব শেষ হলেও আগামীকাল শুক্রবার দুপুরে পূর্ণসেবা গ্রহণের মধ্যে দিয়ে সাধুরা আখড়াবাড়ী ত্যাগ করবেন।

রাতে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি আনুষ্ঠানিকভাবে এই উৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা করার কথা রয়েছে।

লালন একাডেমির এডহক কমিটির সদস্য সেলিম হক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘১৮ মার্চ পবিত্র সবেবরাতের কারণে এবারের লালন স্মরণোৎসব দোলপূর্ণিমার দুই দিন আগে আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। হিসাব অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার পূর্ণিমা। দুইশ বছরের রেওয়াজ ধরে আজ সকালে বাল্যসেবা এবং দুপুরে পূর্ণসেবার মধ্য দিয়ে অষ্টপ্রহরের সাধুসঙ্গ শেষ হবে।’

এদিকে গতকাল বুধবার রাতে লালন একাডেমির মূল মঞ্চে দ্বিতীয় দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ। তিনি বলেন, ‘বেশি বেশি গবেষণার মাধ্যমে লালনের মানবমুক্তির বাণীর মর্মকথা, লালনের ভাবাদর্শ বিশ্বের কাছে যদি আরও বেশি করে পৌঁছে দেওয়া যায়, তাহলে মানবসভ্যতার জন্য উপকারে আসবে। ঝগড়া, হিংসা, দেশে দেশে সংঘাত থাকবে না।’

লালন একাডেমির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এসময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন—কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা প্রমুখ। এতে প্রধান আলোচক ছিলেন লালন একাডেমির সাবেক সহসভাপতি আব্দুর রশিদ চৌধুরী।

আলোচনা সভা শেষে মধ্যেরাত পর্যন্ত লালনের গান পরিবেশন করেন লালন একাডেমির শিল্পীরা।

এদিকে লালনকে স্মরণ ও অবাধ্য মনকে শুদ্ধ করতে সারাদেশ থেকে আসা বাউল ফকির ও সাধুরা আখড়াবাড়ী চত্বর জুড়ে খণ্ড খণ্ড আসর জমিয়েছেন। তাঁদের গান শুনতে ভিড় করছেন সাধারণ শ্রোতা ও দর্শনার্থীরা।

লালন ভক্ত-অনুসারীরা বলেন, লালন আমাদের হিংসা, জাতপাত ভুলে সব মানুষকে একই স্রোতধারায় আনতে প্রেরণা জুগিয়েছেন। এই উৎসবের মাধ্যমে উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক মহাগুরু লালনের জাতপাতহীন, মানবমুক্তির বাণীর মর্মকথা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পারলে ঝগড়া, হিংসা, দেশে দেশে সংঘাত থাকবে না। তবেই সফল হবে এই উৎসব।’

‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’—লালন ফকিরের এ অমর বাণীকে ধারণ করে গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে এ উৎসব। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে লালনের কর্মময় জীবন ও দর্শন নিয়ে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামীণ মেলা।

দোল পূর্ণিমার এমন দিনেই লালন সাঁইজিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ার কালী নদী থেকে উদ্ধার করা হয়। প্রায় দেড়শ বছরের বেশি সময় আগে বাউল সম্রাট লালন ফকির আখড়াবাড়িতে বাউলদের খাঁটি করে তুলতে তাঁর জীবদ্দশায় দোল পূর্ণিমা রাতে সাধু সঙ্গ উৎসব করতেন। ১২৯৭ বঙ্গাব্দে তাঁর তিরোধানের পরও সাধক লালনের জীবনকর্ম, জাতহীন মানব দর্শন, অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনা বিষয়ক এ উৎসব চালিয়ে আসছেন তাঁর অনুসারীরা।