জঙ্গি ছিনতাইয়ের পর ৫ কারা কর্মকর্তা বদলি
ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি ছিনতাইয়ের পর কারাগারের পাঁচ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ আবু সাঈদ মোল্লা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ঢাকা বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক মোহাম্মদ তৌহিদুর হককে বদলি করা হয়েছে রংপুরে। কারা উপমহাপরিদর্শক মো. আলতাব হোসেনকে রংপুর থেকে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। আর চট্টগ্রাম বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক এ কে এম ফজলুল হককে ঢাকা বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া গাজীপুরে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. আব্দুল আজিজকে বদলি করা হয়েছে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার সামলে আসা জ্যেষ্ঠ জেল সুপার সুব্রত কুমার বালাকে পাঠানো হয়েছে কাশিমপুরে।
গত রোববার দুপুরে পুরান ঢাকার জনাকীর্ণ আদালত থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) নেতা মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের সহযোগীরা। তাদের দুজনকেই সেদিন কাশিমপুর কারাগার থেকে আদালতে হাজির করতে ঢাকায় আনা হয়েছিল। সেদিন আদালতে দায়িত্বরত প্রসিকিউশন পুলিশের এক পরিদর্শকসহ পাঁচজনকে ইতোমধ্যে বরখাস্ত করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীর ভাষ্য অনুযায়ী, সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল শুনানি শেষে হাজতখানায় নেওয়ার সময় পুলিশের দিকে ‘স্প্রে মেরে’ তাদেরকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ঘটনা তদন্তে ঢাকা মহানগর পুলিশ এবং পুলিশ সদরদপ্তর দুটি তদন্ত কমিটি করেছে। ‘রেড অ্যালার্ট’ জারির পাশাপাশি দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে ঘোষণা করা হয়েছে ১০ লাখ টাকা করে পুরস্কার।
এদিকে, আদালত প্রাঙ্গণ থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দীপন স্মৃতি সংসদের গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। সংসদের সদস্য সচিব ডা. রাজিয়া রহমান জলি স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রোববার দুপুরে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের প্রধান ফটকের সামনে থেকে দীপন হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত, বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আদালতের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কোনোপ্রকার আগ্নেয়াস্ত্র ব্যতীত শুধু পিপার স্প্রে ব্যবহার করে শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম যানজটপূর্ণ এলাকা থেকে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার অস্বাভাবিক ঘটনা রাষ্ট্র ও সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আদালত প্রাঙ্গণের নিরাপত্তায় অব্যবস্থাপনা এবং দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের চরম অবহেলা, অসতর্কতা বা সহযোগিতায় প্রশিক্ষিত জঙ্গিগোষ্ঠির নিখুঁত পরিকল্পনা সহজতরভাবে বাস্তবায়ন হওয়ায় দীপন স্মৃতি সংসদের পক্ষ থেকে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। জঙ্গিবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কারাবন্দি আসামিদের সুপরিকল্পিত যোগাযোগ কীভাবে ঘটে সে বিষয়টিও তদন্তের দাবি রাখে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দেশে আইনের শাসন বহাল রাখার জন্য দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালনের নীতি বাস্তবায়নের ব্যাপারে রাষ্ট্র ও সরকারের বিভিন্ন বিভাগের আরও বেশি সতর্ক ও আন্তরিক হওয়া জরুরি। শহরের সব সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সিসিটিভি সার্ভাইলেন্সের আওতায় থাকার পরও তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেও আসামিদের উদ্ধার করতে না পারা দুঃখজনক।