জোয়ারে ভাসছে সাতক্ষীরার ৩ ইউনিয়ন, স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ

Looks like you've blocked notifications!
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের লোকজন প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে না থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ করছে। ছবি : এনটিভি

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন এখন জোয়ারের পানিতে ভাসছে। ভাটায় এই পানি নেমে গেলেও বাঁধ না থাকায় হু হু করে পানি ঢুকছে জনপদে। তাই গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে। আজ রোববার সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে বিভিন্ন স্থানে।

গত ২৬ মে দুপুরে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বাংলাদেশে আঘাত না হানলেও তার প্রভাবে সাতক্ষীরার সুন্দরবন সংলগ্ন সব নদ-নদীর পানি ছয় ফুট পর্যন্ত বেড়ে যায়। তীব্র স্রোতে জলোচ্ছ্বাসের মুখে ধসে যায় এ এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধগুলো। ফলে গ্রাম, জনপদ, রাস্তাঘাট, স্কুল, হাটবাজার, সব স্থাপনাসহ তলিয়ে যায় শত শত বিঘা জমির চিংড়ি ঘের। মানুষ হয়ে যায় দিশেহারা। তারা আশ্রয়কেন্দ্রে না উঠলেও অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মুখে পড়ে। তারা প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজেরাই বাঁধ নির্মাণে উদ্যোগী হয়।

শ্যামনগরের পদ্মপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘আমরা আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এবারও সর্বস্বান্ত হয়েছি। টেকসই বাঁধ নির্মাণ ছাড়া আমাদের বাঁচার উপায় নেই।’

মাটিশ্রমিক আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমরা একযোগে কাজ করছি।’

পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম জোয়ারের পানিতে এখন সয়লাব হয়ে আছে। এখানকার বাড়িঘর ছাড়াও লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে চিংড়ি খামার। স্থানীয়রা বারবারই টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের লোকজন প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে না থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ করছে। ছবি : এনটিভি

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. আমজাদ হোসেন বলেন, শত শত মানুষ বাঁধ নির্মাণের কাজে নেমেছে। বাঁচতে হলে বাঁধ নির্মাণ করতেই হবে।

জেলা মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, জোয়ারের পানিতে সাত হাজার ৬৫০টি চিংড়ি ঘের সয়লাব হয়ে সব মাছ ভেসে গেছে। এতে কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

অপরদিকে পাউবো সূত্রে জানা গেছে, মোট ১৩টি পয়েন্টে ভাঙনে প্রায় ৯০ কিলোমিটার বাঁধ কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রতিবন্ধী মনির হোসেন বলেন, দুর্যোগ হলে এই ইউনিয়নের ৩২ হাজার মানুষের জন্য রয়েছে মাত্র আটটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। সেখানে প্রতিবন্ধী, নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে পড়ে।

দক্ষিণের পদ্মপুকুর, গাবুরা ও প্রতাপনগর ইউনিয়ন চিংড়ি উৎপাদনের উপযুক্ত স্থান। এ বছর ১০ হাজার কোটি টাকার চিংড়ি রপ্তানির সুযোগ ছিল। চিংড়ি ধরা মৌসুমের শুরুতেই ভয়াল ইয়াসের জোয়ার সর্বনাশ ডেকে এনেছে।

চিংড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম বাবলা বলেন, ভরা মৌসুমে ইয়াসের আঘাতে সব চিংড়ি ঘের লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। রপ্তানি ব্যহত হবে। টেকসই বাঁধ না দিতে পারলে এসব দ্বীপ ইউনিয়ন বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গ্রামবাসী সম্মিলিতভাবে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।