ঝিনাইদহে জানাজা শেষে সাভারে শায়িত নূরে আলম সিদ্দিকী

Looks like you've blocked notifications!
নূরে আলম সিদ্দিকীর মরদেহে ঝিনাইদহ সরকারি বালক বিদ্যালয় মাঠে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার প্রদান করেন জেলা পুলিশের একটি চৌকস দল। ছবি : এনটিভি

স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক নূরে আলম সিদ্দিকীর প্রথম জানাজা ঝিনাইদহ সরকারি বালক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার (২৯ মার্চ) বেলা পৌনে ২টার দিকে অনুষ্ঠিত জানাজা পড়ান ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা দেলোয়ার হোসেন।

জানাজায় অংশ নেন হাজারও মানুষ। এর আগে জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম ও পুলিশ সুপার মো. আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার দেয় জেলা পুলিশের একটি চৌকস দল। এ সময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর।

এই বীরমুক্তিযোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ঝিনাইদহ জেলা প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামজিক সংগঠনের নেতারা। এ সময় পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল হাই, ঝিনাইদহ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও মরহুমের বড় সন্তান তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি, জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল মজিদসহ অনেকে।

জানাজা শেষে মরহুমের মরদেহ শেষবারের জন্য দেখতে সর্বস্তরের মানুষ ঢল নামে। বেলা পৌনে ৩টার দিকে স্থানীয় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়াম থেকে মরদেহ নিয়ে হেলিকপ্টার ঢাকার উদ্দেশে উড়াল দেয়।

নূরে আলম সিদ্দিকী ১৯৪০ সালের ২৬ মে জন্মগ্রহণ করেন। ৬২ সালের ছাত্র আন্দোলন, ৬ দফা আন্দোলন, বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনসহ তৎকালীন সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। দিনে দিনে দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেন তিনি। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ওই সময় স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কও ছিলেন তিনি। ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম ও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মরহুম মসিউর রহমানের কাছে পরাজিত হন। বহুবার কারাবরণ করা এ নেতা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার চারজন ছাত্র নেতার মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। যে কারণে চার খলিফার একজন হিসেবে পরিচিতি ছিল তাঁর। গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা নিয়ে লিখেছেন বই। কথা বলেছেন গণমাধ্যমে। বেশ কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তিনি। শিল্পপতি হিসেবে দেশের বাইরেও নাম ছড়িয়েছিল তাঁর।

ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, অজানা অভিমানে নিজ পৈতৃক বাড়িতে সাম্প্রতিক সময়ে আসেননি। দুবার ঝিনাইদহ-২ আসন দখলে রেখেছেন বড় ছেলে তাহজীব আলম। তবে ভোটের সময় নূরে আলম এলাকায় এসেছিলেন—এমন খবর নেই। জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা ছাড়াও যুবলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগ ছাত্রলীগের নেতারা জানাজায় অংশ নেন। প্রিয় নেতার মরদেহ দেখতে গ্রামাঞ্চল থেকেও ছুটে এসেছিলেন হাজারো নারী-পুরুষ।

আজ ভোর ৪টার দিকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নূরে আলম সিদ্দিকীর মৃত্যু হয়। দুপুর ১২টা ৬ মিনিটে দিকে তাঁর মরদেহ বহন করা মেঘনা এভিয়েশনের একটি হেলিকপ্টার স্থানীয় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে অবতরণ করে। এ সময় মরহুমের বড় ছেলে সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমিসহ পরিবারের সদস্যরা সঙ্গে ছিলেন। সেখান থেকে মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় সরকারি বালক বিদ্যালয় মাঠে। বিকেলে ঢাকার গুলশানের আজাদ মসজিদ প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বাদ মাগরিব সাভারের জিরানী বাজার এলাকায় মরদেহ নেওয়া হয়। সেখানে নিজের তৈরি করা মসজিদ প্রাঙ্গণে দাফন করা হয় তাঁর মরদেহ। মৃত্যুকালে স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন নূরে আলম সিদ্দিকী। তাঁর মৃত্যুতে ঝিনাইদহে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।