টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের নিতে হচ্ছে বিনামূল্যের মাস্ক

Looks like you've blocked notifications!
নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেওয়া বিনামূল্যের মাস্ক। ছবি : এনটিভি

নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া বিনামূল্যে বিতরণের মাস্ক নিতে হচ্ছে টাকার বিনিময়ে। এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

জানা গেছে, মহামারি করোনা শুরুর পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করোনা প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জেলার সর্বত্র সচেতনতামূলক প্রচারণা, বিনামূল্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের মধ্যে বিতরণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ মাস্ক দেওয়া হয়।

কিন্তু আটপাড়া উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জেলা প্রশাসনের দেওয়া সেসব বিনামূল্যে বিতরণের মাস্ক টাকার বিনিময়ে নিতে হচ্ছে। প্রতিটি মাস্কের মূল্য ধরা হয়েছে ১৭ টাকা। এরই মধ্যে উপজেলার প্রায় ৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টাকার বিনিময়ে মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের নির্দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মাস্ক সংগ্রহ করেছেন।

নেত্রকোনার আটপাড়ার দেওগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেঘারকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের মুখে লাগানো রয়েছে সবুজ রঙের মাস্ক। মাস্কের গায়ে লেখা রয়েছে ‘নেত্রকোনা জেলা প্রশাসন, সৌজন্যে আটপাড়া উপজেলা প্রশাসন’।

দেওগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাজা মজিবুর রহমান জানান, তার বিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে। এরই মধ্যে তিনি উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে ১০০ মাস্ক নিয়েছেন। প্রতিটি মাস্কের দাম ধরা হয়েছে ১৭ টাকা।

একই ধরনের কথা বলেন মেঘারকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৃণাল চন্দ্র পণ্ডিত ও শুনই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নাজমুল হক। তারা বলেন, ‘আমরা ৫০ পিস করে মাস্ক নিয়েছি। প্রতি পিস মাস্কের দাম ধরা হয়েছে ১৭ টাকা।’

আটপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও মল্লিকপুর শুনই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি রাহাত বিশ্বাস বলেন, ‘শুনেছি মাস্ক দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। বিনামূল্যে বিতরণের ওই মাস্ক দিয়ে কেন টাকা নেওয়া হয়েছে বলতে পারব না।’

আটপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেলিমা আক্তার খাতুনের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনও রিসিভ করেননি।

আটপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা সুলতানা বলেন, ‘বিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষার্থীরা সার্জিকেল মাস্ক ব্যবহার করছিল। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয় কাপড়ের মাস্ক ব্যবহারের। উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে কাপড়ের মাস্ক বানিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই জেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া আমার কাছে মজুদ থাকা মাস্ক দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আরও যে মাস্ক দেওয়া হবে, তখন টাকা নেওয়া হবে না।’

আটপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাজি খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষার জন্য আমরা কাজ করছি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের মাস্ক টাকার বিনিময়ে দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে কেউ আমার সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করেনি।’ 

নেত্রকোনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু মাস্ক ইউএনওর কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন। তবে কীভাবে সংগ্রহ করেছেন, তা বলেননি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’ 

নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান বলেন, ‘মহামারি করোনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য জেলার বিভিন্ন উপজেলায় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে বিনামূল্যে মাস্ক দেওয়া হয়েছে। টাকার বিনিময়ে মাস্ক দেওয়ার জন্য বলা হয়নি। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যদি টাকা নেওয়া হয়ে থাকে, তা ঠিক হয়নি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’