টিকটকের মাধ্যমে চার বিয়ে করেছেন রাজ, সাজতেন র‍্যাব কর্মকর্তা

Looks like you've blocked notifications!
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে টিকটক রাজ ওরফে আব্দুর রাকিব। ছবি : সংগৃহীত

টিকটক রাজ ওরফে আব্দুর রাকিব (২৬) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে নিজের পরিচয় দিতেন। র‍্যাব ও বিজিবির পোশাক পরে তিনি টিকটক ভিডিও তৈরি করতেন। পরে টিকটকের মাধ্যমে নারীদের প্রলুব্ধ করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অন্তরঙ্গ ভিডিও তৈরি করতেন।

ওই অন্তরঙ্গ ভিডিও দিয়ে রাজ ভুক্তভোগী নারীদের ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নিতেন। শুধু তাই নয়, টিকটকের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত তিনি চারটি বিয়ে পর্যন্ত করেছেন। আজ মঙ্গলবার এমনটি জানিয়েছে র‍্যাব।

দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘টিকটকের মাধ্যমে নারীদের প্রলুব্ধ করা, অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, অন্তরঙ্গ ছবি বা ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগে টিকটক রাজকে গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।’

টিকটক রাজকে গ্রেপ্তারের সময় একটি মুঠোফোন, সাতটি সিমকার্ড, একটি মেমোরি কার্ড, র‌্যাব ইউনিফর্ম ও স্কার্ফ, ভুয়া আইডিকার্ড, চেইনসহ বাঁশি, বুট ইত্যাদি জব্দ করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাজ জানিয়েছেন, তিনি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে পরিচয় দিতেন। এবং এর মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন অপরাধ করতেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, টিকটক রাজ দুই বছর ধরে অনলাইন প্লাটফর্মে অনৈতিক সম্পর্ক, অশ্লীল ভিডিও ধারণ, ব্ল্যাকমেইল ও অর্থ আত্মসাৎ করে আসছেন। তার নির্মিত ও প্রচারিত মুখরোচক ভিডিওর মাধ্যমে টিকটকে এরই মধ্যে ২০ লাখের বেশি ভিউ এবং ফলোয়ার অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন রাজ। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মতো চুল কাটাসহ পোশাক পরতেন। এ অবস্থায় টিকটক করে তা ছড়িয়ে দিতেন। কখনো তিনি বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রচারমূলক ভিডিওসমূহ সুবিধাজনকভাবে এডিট করে সেখানে নিজের অবস্থান দেখিয়ে প্রচারও করতেন। একইভাবে ফটোশপ করে বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকাণ্ডে তার উপস্থিতি প্রচার করতেন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘রাজ টিকটকে মেয়েদের মধ্য থেকে যারা দামী অলংকার পরিধান করতেন বা অবস্থা সম্পন্ন মনে হতো, তাদের টার্গেট করতেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রলোভনে প্রলুব্ধ করে তাদের সঙ্গে ঠকবাজি বা প্রতারণার মাধ্যমে তাদের গলার হারসহ অন্যান্য অলংকার ও অর্থ আত্মসাৎ করতেন। রাজ নিজেকে বিজিবির একজন ল্যান্স নায়েক পদবির কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিতেন। বিজিবি থেকে র‍্যাবে তার পদায়নের ফলে তিনি র‌্যাব-১২-এ কর্মরত বলে মিথ্যা পরিচয় দিতেন। র‌্যাব-১২ থেকে তার র‌্যাব-৫-এ পোস্টিং হয় এবং পরবর্তীতে র‌্যাব-৫ থেকে ঢাকায় র‌্যাবে পোস্টিং হয় বলে তার অনুসারীদের জানাতেন।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রাজের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পর্যন্ত। তিনি আগে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। বর্তমানে বগুড়ায় একটি আবাসিক হোটেলের সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি এ পর্যন্ত টিকটকের মাধ্যমে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে চারটি বিয়ে করেছেন। এ ছাড়া শতাধিক নারীকে তিনি বিভিন্নভাবে প্রতারিত করেছে। রাজ মূলত বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্থাপনার আশেপাশে টিকটক ভিডিও তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। তার বিকরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।