টিকানো গেল না বাঁধ, ফসল তলিয়ে সারা

Looks like you've blocked notifications!
সুনামগঞ্জের গুরমার হাওরের বাঁধ আজ রোববার ভেঙে যায়। ছবি : এনটিভি

বাঁধ বাঁচাতে টানা ১৭ দিন পানির সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন সুনামগঞ্জ প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, পিআইসি ও হাওরপাড়ের মানুষ। কিন্তু, হলো না শেষ রক্ষা। গুরমার হাওরের বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেল হাজার হাজার হেক্টর ফসল। চোখের সামনেই যেন ডুবে গেল কৃষকের স্বপ্ন।

আজ রোববার বিকেল পাঁচটার দিকে এ বাঁধ ভেঙে যায় বলে স্থানীয় কয়েকটি সূত্রে জানা যায়। এর আগে সকাল ৮টায় ওয়াচ টাওয়ার-সংলগ্ন বাঁধের ওপর দিয়েও গুরমা হাওরে পানি প্রবেশ শুরু করে।

সেসময় সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানির উচ্চতা রোববার দুপুর ১২টায় ছিল পাঁচ দশমিক ৮৭ মিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি বেড়েছে ৪০ সেন্টিমিটার। এ ছাড়া জেলার সীমান্তবর্তী যাদুকাটায় এ সময়ে পানি বেড়েছে ৭১ সেন্টিমিটার ও পাটলাই নদে ৪৩ মেন্টিমিটার। এ ছাড়া সুনামগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১৩ মিলিমিটার।

জানা গেছে, জেলার তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ারের নজর খালী বাঁধটি গত ১ এপ্রিল ভেঙ্গে যায়। এরপর টাঙ্গুয়ার হাওরের পাশের গুরমার হাওরের বাঁধ রক্ষায় রাতদিন প্রশাসনের সঙ্গে হাওরে কাজ করেছেন এলাকাবাসীও। ফসল বাঁচাতে তাঁরা ছিলেন মরিয়া। বাঁধ রক্ষায় স্থানীয় কৃষক, প্রশাসনের কর্মকর্তা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও পিআইসির মানুষ রোজার মধ্যেও নেননি বিরতি। ইফতার থেকে সেহরি, সার্বক্ষণিক বাঁধের নজরদারীতে থাকতেন তাঁরা।

এক রকম পানির সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন নিজেদের সম্বল ফসল রক্ষায়। কিন্তু, গত কয়েকদিনের টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের চাপ সামলাতে না পেরে বিকেলে তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওরের পাশের গুরমার হাওরের বাঁধটি ভেঙে যায়। এতে করে দুই হাজার হেক্টর বোরো ফসল তলিয়ে যাবার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ১৭ দিন এই বাঁধ টিকাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু, প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বাঁধ রক্ষা করা যায়নি। তবে, বাকি যে হাওরগুলো আছে, সেগুলো রক্ষা করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পানি গুরমার হাওরের যতটা না ক্ষতি হবে, তার থেকে বেশি ধর্মপাশা ও জামালগঞ্জের হাওরের ফসলের ক্ষতি হবে। আর গুরমার হাওরের বাঁধ ভেঙে যওয়ায় কৃষক বাঁধ রেখে হাওরে আধাপাকা ধান কাটতে চলে গেছেন।

এর আগে প্রশাসন সুনামগঞ্জে আকস্মিক বন্যার সতর্কতা জারি করে।  ১০ থেকে ১৭ এপ্রিল ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করা হয়। এ সময় কৃষকদেরকে ৮০ শতাংশ পাকা ধান কাটারও নির্দেশ দেওয়া হয়।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম বাঁধ ভাঙার খবর নিশ্চিত করে বলেন, ‘নদ-নদীতে গত তিন দিন ধরে পানি বাড়ছে। আপরমারা বাঁধ উপচে সকাল থেকে পানি প্রবেশ করছে। এই বাঁধটি রামসার নীতিমালার কারণে পাউবো সেখানে কাজ করে না।’

জানা গেছে, গুরমা এক্সটেনশন বাঁধে এবার ১৩টি পিআইসি কাজ করেছে। বরাদ্দ ছিল প্রায় আড়াই কোটি টাকা।