‘ট্রেন কই, ট্রেন? কখন আসবে?’
ছোট্ট দুই শিশু। নাম মাইজা রহমান মাদিহা (৩) ও মোবাশিরা রহমান মুসারাত (৬)। সেই সকাল ৬টার দিকে কমলাপুর রেল স্টেশনে বাবা-মায়ের সঙ্গে পৌঁছায় তারা। কারণ, তাদের বহনকারী নীলসাগর এক্সপ্রেস নামের ট্রেনটি ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা।
সকালে যখন মাহিদা ও মুসারাত স্টেশনে পৌঁছায়, তখন তারা ছিল উল্লসিত। গ্রামে যাচ্ছে বলে কথা। এরপর শুরু হয় অপেক্ষার পালা। কিন্তু, ট্রেন আসে না, আসে না; আসেই না। ফলে, স্টেশনের মেঝেতে কাগজ বিছিয়ে কাটাতে হয়েছে তাদের।
তখন দুপুর ২টা। দুই শিশুর বাবা মাহবুবুর রহয়ান রাজু ও মা রহিমা তাদের নিয়ে বসে ছিলেন। সে সময় দুটি শিশুই ললিপপ খাচ্ছিল। কথা প্রসঙ্গে রাজু বলছিলেন, ‘আমার দুই মেয়েই ক্লান্ত হয়ে কাগজের ওপর ঘুমিয়েছে অনেকক্ষণ। আর আমরা দুজন বসেছিলাম পাশে।’
মাদিহার কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেমন লাগছে এখন? উত্তরে সে বলে, ‘ট্রেন কই, ট্রেন? কখন আসবে?’। বালি (বাড়ি) যাব।’ এরপরেই মেয়েটির মুখ মলিন হয়ে ওঠে। সে সময় মায়ের পায়ের ওপর বসেছিল শিশুটি।’
পাশে থাকা মা রহিমা দুপুর ২টার সময় বলছিলেন, ‘সেই সকাল থেকে অপেক্ষা করছি। শুনছি, বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে ট্রেন আসবে। জানি না কখন আসবে।’
এ তো গেল এক পরিবারের দৃশ্য। এমন শতশত মানুষ সেই সকাল থেকে অপেক্ষায় ছিল, ট্রেন আসার। আর এমন অপেক্ষায় থাকা কাউকে কাউকে ঘুমাতে দেখা গেছে। কেউ আসন গেড়ে পরিবারের সঙ্গে রুটি-কলা খাচ্ছিল। কেউ-বা আবার হেঁটে হেঁটে ঘুরছে। কারণ, সকাল থেকে নীলসাগরের অপেক্ষায় থাকা লোকজনের যে আর কোনো কাজ ছিল না।
একই ট্রেনের নাহিদ নামের আরেক যাত্রী স্টেশনেই ঘুমিয়ে ছিলেন। তখন দুপুর ২টা ১০ মিনিট। ঘুম থেকে উঠে চোখ মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছিল গ্রামের বাড়ি পৌঁছে তারপর ঘুমিয়েছি। কিন্তু, তা তো না। চোখ মেলে দেখি, আশপাশে মেলা লোক। আর আমি স্টেশনে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শাহীন হোসেন। তিনি পরিবার নিয়ে যাবেন গ্রামে ঈদ করতে। তার বহনকারী ট্রেনের নাম রাজশাহী কমিউটার। ট্রেনটি ১২টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ছাড়েনি। শাহীন বলছিলেন, ‘আর কত সময় অপেক্ষা করতে হবে জানি না। তবে, অপেক্ষা শেষে বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা হবে। এটা ভেবেই ভালো লাগছে।’