সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে ‘সাড়ে ১৫ কিমিতে’ ৫০ টাকা ভাড়া আদায়

Looks like you've blocked notifications!
নারায়ণগঞ্জ শহর। ফাইল ছবি

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সরকার যে হারে বাসভাড়া পুনর্নিধারণ করে দিয়েছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে তারচেয়েও বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম।  

আজ মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম, নারায়ণগঞ্জের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহ্বায়ক বলেন, ‘সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের বাসমালিকরা বিআরটিএর কোনোরূপ প্রজ্ঞাপন জারির আগেই নারায়ণগঞ্জ-ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটে বেআইনিভাবে নিজেদের ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। বাসমালিকরা সিন্ডিকেট করে বছরের পর বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে।’

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের প্রকৃত দূরত্ব মেপে ভাড়া পুনর্নিধারণের দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। পাশাপাশি বিআরটিসির নন-এসি বাসের সংখ্যা বাড়ানোরও দাবি জানানো হয়।  

গত ৩ নভেম্বর সরকার খুচরা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটার ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করেছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে এরপর গত ৫ নভেম্বর ভোর থেকে সারা দেশে পণ্য ও যাত্রীবাহী সড়ক পরিবহণে ধর্মঘট শুরু করে মালিক ও শ্রমিকরা।

সরকার গত রোববার নতুন করে বাসভাড়া পুনর্নিধারণ করে দেয়। এতে দূরপাল্লায় বাসে প্রতি কিলোমিটারে ১.৮০ টাকা এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাসে ২.১৫ টাকা করে ভাড়া দিতে হবে যাত্রীদের। মিনিবাসের ক্ষেত্রে এই ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ১.৬০ টাকা থেকে বেড়ে হচ্ছে ২.০৫ টাকা। সবশেষ দূরপাল্লার বাসের ক্ষেত্রে ১.৩৯ টাকা এবং মহানগরের ক্ষেত্রে ১.৭০ টাকা ভাড়া ছিল। এই হিসাবে দূরপাল্লার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ এবং মহানগরীতে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ ভাড়া বাড়ছে।

এ ছাড়া বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা এবং মিনিবাসে আট টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সিএনজিচালিত বাসের ক্ষেত্রে এই ভাড়া প্রযোজ্য হবে না। এই ভাড়া শুধু ডিজেলচালিত বাসের জন্য। তবে, বাসভাড়া বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যাত্রীদের সঙ্গে পরিবহণ শ্রমিকদের বচসার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের দূরত্বের বিষয়ে রফিউর রাব্বি বলেন, ‘২০১১ সালে আমরা লক্ষ্য করলাম, পরিবহণ মালিকরা তাদের অতিরিক্ত ভাড়াকে বৈধ করতে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রোডের মিথ্যা দূরত্ব হাজির করছে। তারা প্রথমে এই দূরত্ব ২১ কিলোমিটার ও পরে সাড়ে ১৯ কিলোমিটার বলে দাবি করেন। যাত্রী অধিকার ফোরাম থেকে মেপে দূরত্ব পাই সাড়ে ১৭ কিলোমিটার। তখন আরটিসির চেয়ারম্যান জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে বিআরটিএ প্রতিনিধি, পরিবহণ মালিক প্রতিনিধি ও যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের প্রতিনিধি দল সরজমিনে মেপে ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে নারায়ণগঞ্জ বাস টার্মিনাল পর্যন্ত দূরত্ব পাই সাড়ে ১৭ কিলোমিটার। ২০১৩ সালে হানিফ ফ্লাইওভার হওয়ার পর এ দূরত্ব দুই কিলোমিটার কমে সাড়ে ১৫ কিলোমিটারে দাঁড়ায়।’   

এতে ভাড়া হিসাবের বিষয়ে বলা হয়, সরকারের ‘মূলতালিকাও যদি আমরা অনুসরণ করি তা হলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের নির্ধারিত ভাড়া দাঁড়ায় (ফ্লাইওভার টোল ছাড়া) ৩০.৬২ টাকা। এখানে সাড়ে ১৫ কিলোমিটারের জন্য ভাড়া প্রযোজ্য হবে দুই রেটে। ৫০ শতাংশ হবে মেট্রোপলিটন রেট ২.১৫ টাকা রেটে এবং ৫০ শতাংশ হবে দূরপাল্লার রেট ১.৮০ টাকা হিসাবে। অর্থাৎ ৭.৭৫ কিলোমিটার ২.১৫ টাকা হিসাবে ১৬.৬৭ টাকা এবং ৭.৭৫ কিলোমিটারে ১.৮০ টাকা হিসাবে ১৩.৯৫ টাকা। মোট ৩০.৬২ টাকা।’

‘এর সঙ্গে যুক্ত হবে ফ্লাইওভারের টোল। গাড়ি প্রতি টোল ২৬০ টাকা। গাড়িতে ৫০ জন যাত্রী থাকলে মাথা পিছু টোল ৫.২০ টাকা। সর্বমোট ভাড়া হবে ৩৫.৮২ টাকা।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘এখানে আমরা যদি পুরো দূরত্ব ১৫.৫ কিলোমিটার মেট্রোপলিটন রেট ২.১৫ টাকায় হিসাব করি, তাহলে ভাড়া দাঁড়ায় ৩৩.৩২ টাকা। এর সঙ্গে ফ্লাইওভারের ৫.২০ টাকা যুক্ত করলে মোট ভাড়া দাঁড়ায় ৩৮.৫২ টাকা।’    

তবে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের এই দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে চলাচলকারী বন্ধন পরিবহণের পরিচালক মোহাম্মদ মিলন। তিনি দাবি করেন, ‘২০১৩ সালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে দূরত্ব মাপা হয়েছিল। তখন ২০ কিলোমিটার দূরত্ব পাওয়া যায়। সেই হিসাবে ২ টাকা ১৫ পয়সা দরে ২০ কিলোমিটারে ভাড়া হয় ৪৩ টাকা। ফ্লাইওভার হওয়ার পর তো সেই দূরত্ব আরও বেড়েছে। আর ফ্লাইওভারে জনপ্রতি টোল আছে আরও সাত টাকা। সেই হিসাবে মোট ভাড়া দাঁড়ায় ৫১ টাকা। আমরা ৫০ টাকা করে নিচ্ছি।’

ভাড়া কমানো না হলে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরেও লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলে জানান ফোরামের নেতারা।

আজকের সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু সিদ্দিক, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি হিমাংশু সাহা, গণফোরাম সমন্বয়ক তরিকুল সুজন প্রমুখ।