‘তামাক চাষ মুক্ত’ হচ্ছে ডিমলা উপজেলা

Looks like you've blocked notifications!
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেনের উদ্যোগে কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা। ছবি : এনটিভি

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলাকে ‘তামাক চাষ মুক্ত’ হিসেবে ঘোষণার পরিকল্পনা নিয়েছে প্রশাসন। উদ্যোগটি বাস্তবায়নে এরই মধ্যে কাজও শুরু হয়েছে তিস্তা নদীবেষ্টিত এ উপজেলায়।

এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেনের উদ্যোগে কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা হয়েছে নীলফামারী-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকারের উপস্থিতিতে।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে পুর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, গয়বাড়ি, নাউতারা, খালিশা চাপানি ও টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নে তামাক চাষ করে থাকেন ২৫৮ জন কৃষক।

স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে কৃষকদের সচেতন করে তোলা, বিকল্প ফসল চাষে আগ্রহ তৈরি করা, প্রণোদনা প্রদান, সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্নভাবে কৃষকদের সহযোগিতা করা হবে এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেকেন্দার আলী বলেন, ‘নদীবেষ্টিত হওয়ায় বালু মাটির কারণে কয়েকটি ইউনিয়নে তামাক চাষ করেন প্রায় ৩০০ কৃষক। কিন্তু, তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন তেমনি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারে না। শুধু হিসাবে তারা বলে থাকে, তামাক চাষে লাভ বেশি। মূলত, তারা লাভ করতে পারছে না।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, তামাকের পরিবর্তে ভুট্টা আবাদ করলে বিঘাপ্রতি ৪০ হাজার টাকা পেতে পারেন এসব কৃষক।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষক মাঠ স্কুল এবং সরাসরি কৃষকদের তামাক চাষে নিরুৎসাহ দিতে কাজ শুরু করেছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘কৃষক আগাম ভুট্টা চাষ করতে পারলে এক জমিতে তাঁরা তিনটি ফসল ফলাতে পারবেন। আমরা বোঝানোর চেষ্টা করছি এবং কৃষির যত সুবিধা রয়েছে, সেগুলো তাঁদের দেওয়ার চেষ্টা করছি, যাতে তাঁরা তামাক আবাদ পরিহার করতে পারে।’

নীলফামারী জেলা তামাক চাষি সমিতির সভাপতি ও জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হামিদুল হক বলেন, ‘বেলেমাটিতে অন্য কোনো ফসল হয় না। সে কারণে তামাক বেশি করেন এ অঞ্চলের কৃষক। সরকার এখনও ধুমপান বন্ধ ঘোষণা করেনি। সে কারণে তামাকের চাষও রয়েছে। তবে, কৃষককে যদি বিকল্প কিছু দিয়ে লাভের আওতায় নিয়ে আসা যায়, তাহলে তামাক চাষ পরিহার করতে আপত্তি থাকবে না তাঁদের। নিঃসন্দেহে আমরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।’

‘তামাক চাষ মুক্ত’ উপজেলা ঘোষণার উদ্যোক্তা ডিমলার ইউএনও বেলায়েত হোসেন জানান, বাংলাদেশের মধ্যে ডিমলা হবে প্রথম কোনো উপজেলা, যেখানে কোনো তামাক চাষ হয় না।

ইউএনও বলেন,’আমরা এ নিয়ে কাজ শুরু করেছি। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এ ঘোষণা দিতে চাই আমরা।’

ইউএনও আরও বলেন, ‘তামাক চাষের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক কৃষকের সঙ্গে কথা বলা হবে, তাঁদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করা হবে এবং তাঁদের বিকল্প পদ্ধতি দিয়ে আমরা এটা নিশ্চিত করতে চাই। সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকারের নেতৃত্বে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছি আমরা। এরই মধ্যে বিভিন্ন জনের মতবিনিময়, পরামর্শ গ্রহণ শুরু করেছি এবং ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আমরা মনে করছি সফল হব।’

নীলফামারী-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার বলেন, ‘তামাক চাষ বন্ধের ব্যাপারে আমি জাতীয় সংসদে বক্তব্য দিয়েছিলাম। তামাকের ক্ষতি নিয়ে কথা বলেছি। আমি আমার নিজ এলাকায় এটি এখন করতে যাচ্ছি। সচেতনতামূলক নানা কাজ, সভা-সমাবেশ ছাড়াও সরকারিভাবে তামাক চাষিদের বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে ক্ষতিকর তামাক চাষ শূন্যের কোটায় আসবে ডিমলা উপজেলায়—এটি আমি নিশ্চিত করতে চাই।’

‘এর জন্য আমি সবার সহযোগিতা চাই এবং বড় একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সারা দেশে ডিমলাকে পরিচিত করতে চাই’, যোগ করেন এ সংসদ সদস্য।