তোতাপুরি ছাগলের খামার করে সফল খলিলুর

Looks like you've blocked notifications!
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামে নিজের তোতাপুরি ছাগলের খামারে খামারি খলিলুর রহমান। ছবি : এনটিভি

জাতে ছাগল। কিন্তু চেহারায় বাঁকা মুখের তোতাপাখির মতো। তাই এদের নাম তোতাপুরি বা তোতামুখী। দেখতে অন্যান্য জাতের ছাগলের চেয়ে একটু অন্যরকম এবং বাঁকা মুখের হওয়ায় লোকজনের এদের প্রতি আগ্রহও একটু বেশি। এই জাতের ছাগলের খামার দিয়ে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন খামারি খলিলুর রহমান।

খলিলুর রহমান ভৈরব উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামের একজন প্রান্তিক খামারি। কৃষি কাজের পাশাপাশি তিনি গরুসহ বিভিন্ন জাতের দেশীয় ছাগল লালন-পালন করেন। কিন্তু প্রায় বছরখানেক আগে ইউটিউবে এই তোতাপুরি জাতের ছাগলের সন্ধান পান তিনি।

এরপর খলিলুর রহমান লোকমারফত তোতাপুরি জাতের ছয়টি ছাগল ও একটি পাঠা কিনে আনেন ভারত থেকে। এখন সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৯টিতে। আরও চারটি গর্ভবতী অবস্থায় আছে। তাঁর খামারে বর্তমানে পৌনে দুই লাখ টাকার একটি পাঠা এবং এক লাখ টাকা মূল্যের একটিসহ ৬০ হাজার টাকা দামের ছাগল আছে।

স্থানীয়ভাবে একেবারেই নতুন এবং বিরল সৌন্দর্যের এই ছাগল এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। সারাক্ষণই আশপাশের ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষের ভিড় লেগে থাকে খলিলুর রহমানের বাড়ি এবং চারণভূমিতে। অনেকেই আবার খোঁজ-খবর নিয়ে নিজেরা এই জাতের ছাগল পালনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

খলিলুর রহমান জানান, এই জাতের ছাগলের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো দৈর্ঘ্য-প্রস্তে এবং ওজনে দেশীয় যেকোনো জাতের ছাগলের চেয়ে বড় এবং ওজনে বেশি। তাই মাংস বেশি হয়। ফলে বাজারদর অনেক বেশি থাকে। বছরে দুবার এক সঙ্গে দুটি করে বাচ্চা দেয়। তবে কখনও কখনও তিনটিও দিয়ে থাকে।

এদের সর্দি আর কৃমি ছাড়া আর কোনো রোগ-বালাই হয় না। ফলে এগুলোর প্রতিষেধক দিয়ে দিলে মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। খাবারে নেই আলাদা বাছ-বিচার। সাধারণত দানাদার বুট-ছোলার ভূষি, ভাতের মাড় এবং ঘাস খেয়ে থাকে এরা।

তোতামুখী ছাগলের খামার অল্পপুঁজিতে লাভজনক একটি কাজ বলে অভিমত এই খামারির। টাকা খরচ করে বিদেশের পাড়ি দেওয়ার চেয়ে এই ছাগলের খামার করে স্বাবলম্বী হওয়া অনেক সহজ বলে অভিমত তাঁর। তাই তিনি বেকার যুবক-যুবতীদের এই খামার গড়ে তোলার পরামর্শ দেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরসহ সরকারি যেকোনো সংস্থা থেকে সহজ শর্তে ঋণ পেলে তিনি খলিলুর রহমান তাঁর খামারকে আরও বড়পরিসরে গড়ে তোলার অভিপ্রায় জানান।

স্থানীয় কৃষকরা জানায়, বিরল সৌন্দর্যের এই ছাগলগুলো দেখতে তাদের খুব ভালো লাগে। দেখতে সুন্দর। ওজনে বড়োসড়ো। লাভও বেশি। এসব তথ্যে তারা এই ছাগলের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। খোঁজ-খবর নিয়ে তারা নিজেরাও খামার গড়ে তুলবে।

ভৈরব উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শিরীনা খাতুন জানান, তোতাপুরি বা তোতামুখী একটি উন্নত জাতের ছাগল। এগুলো সাধারণত ৮০ থেকে ৯০ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। সাইজে বড় এবং ওজনে বেশী হওয়ায় এদের বাজারদর ভালো। দেখতে সুন্দর। তাই মানুষের আগ্রহ বেশি। এদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। এদের খাবার-দাবারও সহজলভ্য।

ডা. শিরীনা খাতুন বলেন, ‘খামারি খলিলুর রহমান এই জাতের ছাগলের খামার করে লাভবান হয়েছেন। তাঁকে আমরা সহায়তা করছি। অন্যরা করতে চাইলে আমরা তাদেরও সব ধরনের সাহায্য করব।’