দেশে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে সরকার : আমীর খসরু

Looks like you've blocked notifications!
দলীয় নেতাকর্মীসহ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আজ রোববার আটক বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর বাসায় যান। ছবি : এনটিভ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর মতো নেতাকে জেলে ঢুকিয়ে রাজনৈতিক অপচিন্তা করছে সরকার। এটি জোর করে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা। সরকার ভয়-ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে, মামলা দায়ের করে, নিপীড়ন-নির্যাতন করে, ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। কিন্তু সেটি তো সম্ভব হবে না। বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা বার্তা দিয়েছে যে, যারা দেওয়ালের লিখন পড়তে পারছে না তাদের জন্য আগামী দিনগুলো খুব কঠিন হবে। আমরা অতিসত্বর রিজভীর মুক্তি চাই।’

আজ রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর আদাবরের বাসায় সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। বিকেলে কারাবন্দি রিজভীর বাসায় যান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি রিজভীর বাসায় গিয়ে তার স্ত্রী আরজুমান আরা বেগমের সঙ্গে কথা বলেন ও রিজভীর বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন। 

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে রিজভী এমন একজন নেতা, যার সততা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, শিক্ষা, সাহস নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। তার মতো নেতাকে জেলে নিয়ে যে অপসংস্কৃতির রাজনীতির চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি কিন্তু ভবিষ্যতে রাজনীতির জন্য মঙ্গলজনক নয়। 

আমীর খসরু বলেন, রিজভীর দরকার উন্নত চিকিৎসা। উন্নত চিকিৎসা ছাড়া তার আগামীর দিনগুলো তো আরও বিষণ্ন হবে। কঠিন সময়ের মধ্যে সে অতিক্রম করছে। এগুলো আমাদের দেশের সাংবিধানিক পরিপন্থী কাজ। বাইরে যতোটুকু জেলের ভিতর গেলে আরও বেশি জুলুমের শিকার হতে হয়। সব জায়গায় নির্যাতন নিপীড়নের একটা অবস্থান তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। 

রিজভীর মামলা নিয়ে প্রশ্ন করলে তার স্ত্রী আরজুমান আরা বলেন, মামলার সঠিক সংখ্যা জানা নেই। যেদিনই তাকে জামিনের জন্য কোর্টে নিয়ে আসা হচ্ছে। সেদিনই তাকে একটা না একটা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। 

এ বিষয়ে আমীর খসরু বলেন, রিজভী সাহেবের যতগুলো জানা মামলা আছে, তার চাইতে কত যে অজানা মামলা আছে তা কেউ জানে না। এবং সরকার সেগুলো প্রয়োজন মতো বের করছে আর সাবমিট করছে। অর্থাৎ জেল থেকে তিনি যাতে বের হতে না পারেন সে বিষয়ে পন্থা অবলম্বন করছে সরকার। 

নির্বাচন বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে আমীর খসরু বলেন, বিএনপির নির্বাচনের বিষয় পরিষ্কার করেছে। বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। নির্বাচনে যেতে হলে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। যে নির্বাচনে দেশের জনগণ। তাদের প্রতিনিধি বাছাই করতে পারবে। তাদের সরকার বাছাই করতে পারবে। যারা জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকবে। এটি যতক্ষণ পর্যন্ত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

রিজভীর স্ত্রী বলেন, তার (রিজভীর) একটি সুচিকিৎসা হওয়া দরকার। ওর কোভিডের কারণে নার্ভের অবস্থা ভীষণ খারাপ। হার্টের রোগী। এগুলো সমস্ত ও ডাক্তারি সার্টিফিকেট আমরা কোর্টে দিয়েছি। তারপরও কোর্ট এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি। আমরা চাচ্ছি, ওকে কোনো একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে নিয়ে এসে চেকআপ করা দরকার। তা না হলে ওর শরীরটা আরও খারাপ হয়ে যাবে। 

এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সহপ্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, সহ দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মাদ মুনির হোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য তারিকুল আলম তেনজিং ও মাহাবুল ইসলাম, জাসাসের আহ্বায়ক হেলাল খান, সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন, জাসাস নেতা মো হাবিবুর রহমান জসিম, যুবদলের কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক মেহবুব মাসুম শান্ত, ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি ওমর ফারুক কাওসার, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি,  ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. তৌহিদ আউয়াল, সামাজিক মাধ্যম বিষয়ক সম্পাদক আপেল মাহমুদ, চট্টগাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লা, ঢাবি ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ, ঢাবি এসএম হল সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ প্রমুখ।

উল্লেখ্য, গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। ওইদিনই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে প্রায় সাড়ে চারশতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেদিন রুহুল কবির রিজভীকেও আটক করে কারাগারে নেওয়া হয়। সম্প্রতি তাকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তিনি কারাগারে যাওয়ার আগে দলের বিভিন্ন বিষয়ে গণমাধ্যমের সাথে নিয়মিত কথা বলতেন। বিশেষ করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ও হামলা-মামলা নিয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন করতেন রিজভী। এরমধ্যে কারাগারে থেকেই গত ১৯ জানুয়ারি এলএলএম (মাস্টার্স) পরীক্ষা শেষ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মোট তিনটি পরীক্ষা কারাগারে দেন তিনি।