ধারের ১২ লাখ টাকা ফেরত না দিতে পাওনাদারকে হত্যা
রাজধানীর শ্যামলীতে প্রকাশ্যে বাংলাদেশ গম গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনোয়ার শহীদকে (৭২) ছুরিকাঘাতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল রোববার রাতে গাবতলী থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব জানায়, মো. সাইফুল ইসলাম (২৬) ওই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার হত্যাকারী এবং মো. জাকির হোসেন (৩৭) হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী। ধার নেওয়া ১২ লাখ টাকা ফেরত না দেওয়ার জন্য আনোয়ার শহীদকে হত্যার পরিকল্পনা করে জাকির।
আজ সোমবার র্যাবের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। র্যাব আরও জানায়, গত বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার পর শ্যামলীর হলি লেনে দুর্বৃত্তরা গম গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনোয়ার শহীদকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীকালে স্থানীয়রা ভুক্তভোগীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় নিহতের ছোট বোন ফেরদৌস সুলতানা (৫৯) রাজধানীর আদাবর থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনবহুল রাস্তায় প্রকাশ্যে নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি ব্যাপক সমালোচিত হয়।
র্যাব এ ঘটনায় ছায়া তদন্ত শুরু করে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও ঘটনাস্থলের আশপাশে ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব গতকাল রোববার রাতে রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে মো. জাকির হোসেন এবং মো. সাইফুলকে গ্রেপ্তার করে। জাকিরের বাড়ি দিনাজপুরের কাহারোলে এবং সাইফুলের বাড়ি দিনাজপুর সদরে বলে জানায় র্যাব।
র্যাব জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী জাকির জানিয়েছে, নিহত বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনোয়ার শহীদ দিনাজপুর শহরে কর্মরত থাকা অবস্থায় তার সঙ্গে পরিচয় হয়, যা পরবর্তী সময়ে ঘনিষ্ঠতায় রূপ নেয়। ভুক্তভোগী দিনাজপুরে জমি কেনার বিষয়ে জাকির মধ্যস্থতা করে। এ ছাড়া নিহত আনোয়ার শহীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে জাকির ১২ লাখ টাকা ধার হিসেবে নেন। নিহত ব্যক্তি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর ঢাকায় থাকা শুরু করলেও ঘনিষ্ঠতার সুবাদে জাকিরের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে যোগাযোগ হতো। বছরখানেক আগে জাকির তার চালের গোডাউন বন্ধক রেখে ২০ লাখ টাকা ঋণ পাইয়ে দিতে আনোয়ার শহীদের সহযোগিতা চায়। সহযোগিতা করতে অপারগতা জানান আনোয়ার শহীদ। এবং এক বছর ধরে তাঁর পাওনা ১২ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য গ্রেপ্তার করা জাকিরকে চাপ দেন। ওই টাকা লেনদেন সম্পর্কে নিহত আনোয়ার শহীদ ও জাকির ছাড়া কেউ জানতো না। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাকির ছয়-সাত মাস ধরে আনোয়ার শহীদকে হত্যার পরিকল্পনা নেয়, যাতে তার ধারের টাকা ফেরত দেওয়া না লাগে।
হত্যাকাণ্ডে জাকির তার চালকলের এক সময়ের শ্রমিক মো. সাইফুলকে যুক্ত করে বলে জানায় র্যাব।