ধূমপায়ী কমলেও যথেষ্ট নয় : তথ্যমন্ত্রী

Looks like you've blocked notifications!
আজ বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে তামাকবিরোধী একটি কর্মশালায় বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ছবি : স্টার মেইল

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘দেশে একসময় ৭০ ভাগের বেশি ধূমপায়ী থাকলেও বর্তমানে তা কমে ৩৫ ভাগে নেমে এসেছে। কিন্তু সংখ্যা কমে এলেও তা যথেষ্ট নয়। এজন্য সরকারের পাশাপাশি অভিভাবক ও সামাজিকভাবে সচেতনা গড়ে তুলতে হবে।’

আজ বুধবার বেসরকারি গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি সংগঠন ভয়েস এবং ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের উদ্যোগে ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক কর্মশালায় ড. হাছান এ মন্তব্য করেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আনুপাতিক হারে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমলেও ২০৪০-এর মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার জন্য তা যথেষ্ট না। এ বিষয়ে সরকার বেশকিছু কার্যকরী আইন প্রণয়ন করলেও দেশকে তামাকমুক্ত করতে হলে তামাকবিরোধী প্রচার বেগবান করতে হবে।’

কর্মশালাটি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদের পরিচালনায় এতে আলোচক টিভি টুডে’র প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী, ধূমপানবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞার হাসান শাহরিয়ার, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের উপদেষ্টা মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

কর্মশালায় তামাক সংক্রান্ত আইন সংশোধনে একসঙ্গে কাজ করার আশা ব্যক্ত করে সংগঠন দুটি। কর্মশালায় বলা হয়, গত এক দশকে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধি পেলেও সিগারেট, বিড়ি বা অন্যান্য তামাক পণ্যের দাম প্রায় অপরিবর্তিত থেকেছে অথবা খুব অল্প বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে তামাক পণ্য থেকে গেছে সহজলভ্য। সহজলভ্যতার কারণে এ পণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়েছে দাঁড়িয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে আইন সংশোধন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মতামত ব্যক্ত করেন আলোচকরা।

আয়োজনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভয়েসের প্রকল্প সমন্বয়কারী জায়েদ সিদ্দিকী। প্রবন্ধে উঠে আসে, বিশ্বে সর্বোচ্চ তামাক ব্যবহারকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম প্রথম দিকে এবং ৩৫.৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাকে আসক্ত। তিনি জানান, গ্লোবাল টোব্যাকো অ্যাটলাস-২০২০ এর হিসাব অনুযায়ী, গত বছর তামাকের করাল গ্রাসে প্রাণ হারিয়েছে এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ। তামাকের কারণে অকালে পঙ্গুত্ব বরণ করে আরও সংখ্য মানুষ। তামাকজনিত কারণে বছরে চিকিৎসার পিছনে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ হাজার কোটি।

তামাকবিরোধী সংগঠন ও সাংবাদিকদের নিজ নিজ জায়গা থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করার আশা ব্যক্ত করেন সিটিএফকের উপদেষ্টা মোস্তাফিজুর রহমান।

টিভিব্যক্তিত্ব মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ধূমপান এমন একটি অভ্যাস যেখানে স্বাস্থ্যের ওপর একটিও ইতিবাচক প্রভাব নেই। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। সংসদে এই বিষয়ে আলোচনা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করেন তিনি।

বুলবুল আরও বলেন, তামাকের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে আয়োজিত দক্ষিণ এশীয় স্পিকার্স সম্মেলনে ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ঘোষণা দেন।

অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা বলেন, অপরিণত বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত তরুণদের মধ্যে শতকরা ৪১ ভাগের পিছনে রয়েছে তামাক সেবন। তিনি বলেন, আইন সংশোধন করে তামাক সেবন কমানো সম্ভব না হলে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ভালো একটা পৃথিবী রেখে যাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।

প্রজ্ঞার হাসান শাহরিয়ার বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সালে তামাক ব্যবহারের হার ১৮ শতাংশ কমে এলেও ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার জন্য তা যথেষ্ট নয়।

ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের গ্র্যান্টস ম্যানেজার আবদুস সালাম জানান, প্রচলিত তামাক আইনে পাবলিক প্লেস এবং গণপরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্দিষ্ট স্থান থেকে শুরু করে, বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপনের সুযোগ, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি পরিচালনা করার অনুমতি, খুচরা শলাকা বিক্রয়ের সংস্কৃতি, তামাকের প্যাকেটের গায়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্ক বার্তার আকার নির্ধারিত না থাকার মতো বেশকিছু ত্রুটি থেকে গেছে। তামাক সেবনের হার কমাতে এই ত্রুটিগুলো সংশোধন করতে হবে এবং ই-সিগারেটের মতো নতুন ধরনের তামাক পণ্যের প্রচার সম্পর্কে এখনই সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।