নওগাঁর সেই স্কুল শিক্ষিকার মামলায় গ্রেপ্তার ২

Looks like you've blocked notifications!
নওগাঁর মহাদেবপুরে দাউল বারবাকপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পালের করা মামলায় গ্রেপ্তার কিউএম সাঈদ টিটো (বাঁয়ে) ও বাসিন্দা কাজী সামছুজ্জোহা মিলন। ছবি : সংগৃহীত

নওগাঁর মহাদেবপুরে দাউল বারবাকপুর উচ্চবিদ্যালয়ে স্কুল ড্রেস না পরায় শিক্ষার্থীদের পেটানোর ঘটনায় সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পালের করা মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শিক্ষক আমোদিনী পাল তাঁর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হিজাব নিয়ে গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো, সাধারণ মানুষ ও স্কুলের অভিভাবকদের উসকানি দিয়ে স্কুলে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, স্কুলে দাঙ্গা সৃষ্টি এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতসহ বেশ কিছু মিথ্যা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার (৯ এপ্রিল) মহাদেবপুর থানায় মামলা করেন।

ওই মামলায় বৃহস্পতিবার দিনগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার লাইব্রেরিপট্টি ও উপজেলার কুশারসেন্টার এলাকায় অভিযান চালিয়ে উপজেলা সদরের বাসিন্দা কিউএম সাঈদ টিটো (৬০) ও কুশারসেন্টার পাড়া এলাকার বাসিন্দা কাজী সামছুজ্জোহা মিলনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আজ শুক্রবার তাদেরকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়।

মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজম উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘মহাদেবপুর উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পাল, সনাতন ধর্মাবলম্বী এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হিজাব নিয়ে গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো, সাধারণ মানুষ ও স্কুলের অভিভাবকদের উসকানি দিয়ে স্কুলে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, স্কুলে দাঙ্গা সৃষ্টি এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতসহ বেশ কিছু অভিযোগে গত শনিবার রাতে মহাদেবপুর থানায় মামলা করেন। এরপর গতরাতে উপজেলা সদরের বাসিন্দা কিউএম সাঈদ টিটো (৬০) ও কুশারসেন্টার পাড়া এলাকার বাসিন্দা কাজী সামছুজ্জোহা মিলনকে (৪৫) আটক করে থানা পুলিশ।’

মামলার অন্য আসামিদের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘আমোদিনী পালের করা মামলায় ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ধরণীকান্ত বর্মণ, সভাপতি মাহমুদুল হাসান সুমন ও নওগাঁর পোরশা উপজেলার গহেরপুর গ্রামের বাসিন্দা সালাউদ্দিন আহমেদসহ অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মহাদেবপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শামিনুল ইসলাম বলেন, ‘পলাতক থাকায় অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। আসামিদের গেপ্তারে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’

মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘নির্ধারিত পোশাক (স্কুল ড্রেস) পরে না আসার কারণে দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীকে শাসন করার ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করা হয় হিজাব পরার শাস্তি হিসেবে। কথিত হিজাব বিতর্কের অন্তরালে রয়েছে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির দ্বন্দ্ব। এদিকে ধর্মীয় ইস্যুতে গুজব ছড়ানো হয়, যা ছিল অপ্রত্যাশিত। সবার উচিত কিছু স্পর্শকাতর বিষয়ে আরও সচেতন হওয়া।’

উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চবিদ্যালয়ের কয়েকজন মেয়ে শিক্ষার্থী ফেসবুকে ‘হিজাব পরায়’ পিটুনির অভিযোগ এনে ফেসবুকে ভিডিও প্রকাশ হয় এবং তা মুহূর্তেই সারা দেশে আলোচনায় আসে। এরপর আরও কিছু ভিডিও আসে। পাশাপাশি বেশ কিছু অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

মেয়েদের অভিযোগের পর তোলপাড়ের মধ্যেই ৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার স্কুলটিতে হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর আসলে কী ঘটেছিল, তা বের করতে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। দায়িত্ব দেওয়া হয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল মালেক, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আরিফ প্রামাণিক ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানকে। গত সোমবার রাতে তদন্ত কমিটি ইউএনও মিজানুর রহমানের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘স্কুল ড্রেস না পরার কারণে স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে দুই শিক্ষক বেত্রাঘাত করেন। তাদের মধ্যে হিন্দু ছাত্রী ও ছেলে শিক্ষার্থীও ছিল। হিজাব পরার কারণে শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয়েছে, এমন তথ্য তদন্ত প্রতিবেদনে পাওয়া যায়নি।’