নওগাঁয় অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ

Looks like you've blocked notifications!
নওগাঁর পত্নীতলা থানা। ফাইল ছবি

নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলায় ঘরে আটকে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে হালিমা খাতুন ওরফে মিষ্টি (২২) নামে এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার আমদাদপুর কমলাবাড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ওই গৃহবধূকে বাঁচাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন তাঁর স্বামী রিপন মিয়াও (২৪)। চিকিৎসকরা বলছেন, তাঁর অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তাঁর শ্বাসনালি দগ্ধ হয়েছে। পুড়ে গেছে শরীরের ৬৫ শতাংশ।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত ওই গৃহবধূর স্বামী বর্তমানে রামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

অগ্নিদগ্ধ দম্পতির স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘরের বাইরে থেকে জানালা দিয়ে দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে প্রথমে গৃহবধূ হালিমার শরীরে আগুন ধরে যায়। এ সময় তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে তাঁর স্বামী রিপনও দগ্ধ হন। তবে পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থলে গিয়ে নাশকতার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, মশার কয়েল থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তাঁরা দগ্ধ হয়ে থাকতে পারেন। 

পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘গতকাল রাত ১১টার দিকে ওই দম্পতিকে হাসপাতালে আনা হয়। দুজনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক ছিল। তাদের মধ্যে রোগী হালিমা খাতুন ওরফে মিষ্টির শরীরের ৮০ শতাংশের বেশি পুড়ে গেছে এবং পুরুষ রোগীর প্রায় ৬৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। দুজনেরই শ্বাসনালি দগ্ধ হয়েছে। আমরা তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করে দেই।’ 

আজ দুপুর ২টার দিকে অগ্নিদগ্ধ রিপনের ফুফাতো ভাই শাহিনুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, রামেক হাসপাতাল থেকে হালিমা খাতুন ওরফে মিষ্টিকে ঢাকায় নেওয়ার পথে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী-নাটোর সড়কের বানেশ্বর এলাকায় মৃত্যু হয়। রিপনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তিনি বর্তমানে রামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

শাহিনুর রহমান আরও বলেন, পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পরও কিছু সময় পর্যন্ত রিপন কথা বলতে পারছিলেন। ওই সময় তাঁর ভাই জানান, ঘরে আগুন ধরার সময় তাঁরা জেগেছিলেন। রাত ১০টার দিকে তাঁর স্ত্রী ঘরের মধ্যে জানালার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় জানালা দিয়ে বাইরে থেকে কে বা কারা তাঁর শরীরে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। তখন রিপন তাঁর স্ত্রীর শরীরের আগুন নেভাতে গেলে নিজের শরীরেও আগুন ধরে যায়। পরে তাঁদের চিৎকার শুনে প্রতিবেশিরা এসে উদ্ধার করে পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। শত্রুতাবশত কেউ এটা করে থাকতে পারে। 

তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে তাঁদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি জানান তিনি।   

এ ব্যাপারে পত্নীতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুল আলম বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। তবে ঘটনাটি সর্বাত্মক গুরুত্ব দিয়ে ইতোমধ্যে তদন্তকাজ শুরু করা হয়েছে। এটা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড, দুর্ঘটনা, নাকি আত্মহত্যার চেষ্টা, তার সত্যতা খুঁজে বের করতেই তদন্ত চলছে।

ওসি আরও বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে ভিকটিমের বক্তব্য অনুযায়ী বাইরে থেকে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন দেওয়ার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, মশার কয়েল থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে তাঁরা দগ্ধ হয়ে থাকতে পারেন। আবার প্রতিবেশিরা বলছে, পারিবারিক কলহের জেরে ওই গৃহবধূ প্রথমে শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে তাঁর স্বামীও দগ্ধ হন। প্রতিবেশিদের বক্তব্য অনুযায়ী এটা আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনাও হতে পারে।

নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পত্নীতলা সার্কেল) আফতাব উদ্দিন বলেন, ‘গতকাল অগ্নিদগ্ধ রিপন মিয়ার বক্তব্যের সঙ্গে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর কোনো মিল পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এটিকে আমাদের কাছে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড বলে মনে হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, মশার কয়েল থেকে সূত্রপাত হওয়া আগুনে তাঁরা দগ্ধ হতে পারেন। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা চলছে।’