নওগাঁয় ভাসমান ডিঙি নৌকায় মিলল স্বামী-স্ত্রী মরদেহ

Looks like you've blocked notifications!
নিয়ামতপুরের শিবনদে ডিঙিতে ভেসে থাকা স্ত্রী তারা বানু (বামে) ও স্বামী রায়হানের মরদেহ। ছবি : এনটিভি

ভাসমান ডিঙি নৌকার ওপরে ছিল স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ। স্বামীর এক হাতের ওপরে রয়েছে স্ত্রীর হাত। মারা যাওয়ার আগে যেন একে ওপরের হাত শক্ত করে ধরে রাখতে চেয়েছে তাঁরা। স্ত্রীর হাতে মেহেদী। কয়েক মাস আগে প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন তাঁরা। পরে যৌতুকের চাপে বাধে দুই পরিবারের দ্বন্দ্ব। তাতেই কি তবে প্রাণ দিতে হলো যুগলকে?—প্রশ্ন অনেকের।

নওগাঁর নিয়ামতপুরে নদীর পানিতে থাকা শ্যাওলার পাশে ছিল ডিঙি নৌকা। তার ওপর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

নিহতরা হলেন—নওগাঁর মান্দা উপজেলার ভারশো ইউনিয়নের বিল সুরশুনিয়া গ্রামের আদম আলীর ছেলে রায়হান আলী (২৫) ও তাঁর স্ত্রী পার্শ্ববর্তী শ্রীকলা গ্রামের ইস্কেন্দার আলীর মেয়ে তারাবানু (১৯)।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রেমের সম্পর্ক করে কয়েকমাস আগে রায়হান আলী ও তারা বানু বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে ছেলের পরিবার মেয়ের পরিবারকে যৌতুকের জন্য চাপ দিত। এ নিয়ে দুই পরিবারের মাঝে দ্বন্দ্ব চলছিল। গতকাল সোমবার রাতে তারা বানু পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খাবার খেয়ে তাঁর ঘরে ঘুমাতে যান। সকালে আর তাকে ঘরে পাওয়া যায়নি। পরে লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে শিবনদে একটি ডিঙি নৌকার ওপর তারা বানু ও রায়হানের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে।

মৃত তারা বানুর বাবা ইস্কেন্দার আলী বলেন, ‘ তারা বানু সোমবার রাতে আমাদের সঙ্গে খাবার খায়। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মেয়ে আমাদের ঘরেই ছিল। তবে, কখন সে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে, আমরা কেউ বুঝতে পারিনি। ছেলের পরিবার যৌতুকের জন্য বিভিন্নভাবে চাপাচাপি করত। এ নিয়ে সংসারে অশান্তি চলছিল। ক্ষোভের বসে তারা আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’

মান্দা উপজেলার ভারশো ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমন বলেন, ‘প্রেম করে বিয়ের পর যৌতুকের চাপাচাপিতে দুই পরিবারের দ্বন্দ্ব ছিল। পরে তারা কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করে। বিকেলে নদীতে জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে নৌকায় দুজনের মরদেহ দেখে নিয়ামতপুর থানায় সংবাদ দেয়।’

নিয়ামতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘তারা বানুর আগে একটা সংসার ছিল। পরবর্তীতে রায়হান আলীর সঙ্গে সম্পর্ক হয়। গত ছয়-সাত মাস আগে তাদের বিয়ে হয়। রায়হানের বাবা-মা এতে মনোক্ষুণ্ন ছিল।’

ওসি আরও বলেন, ‘সোমবার রাতের কোনো এসময় তারা শিবনদের ডিঙি নৌকায় চড়ে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করে। সংবাদ পেয়ে বিকেলে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নওগাঁ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিয়ামতপুর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।’