নওগাঁয় লোডশেডিংয়ে বোরো আবাদ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত

Looks like you've blocked notifications!
নওগাঁ নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র। ছবি : এনটিভি

তীব্র শীতের মধ্যেও নওগাঁয় চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ পাওয়ায় লোডশেডিং অব্যাহত রয়েছে। ফলে বিদ্যুতের অভাবে বোরো আবাদের জমিতে সেচ কার্যক্রম ও কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

নওগাঁ পৌর শহরসহ জেলার ১১টি উপজেলায় তিন-চার দিন ধরে দিন-রাতের অর্ধেক সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে বিপাকে পড়েছে কৃষক ও কলকারখানার মালিকরা।

নওগাঁ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ ও সমিতি-২ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় পল্লীবিদ্যুতের আওতায় তিন লাখ ৯০ হাজারের অধিক গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে ৫২ হাজার বাণিজ্যিক, ১৫ হাজারের অধিক সেচপাম্প ও দুই হাজারের অধিক ছোট-বড় শিল্পকারখানা রয়েছে। পল্লী বিদ্যুতের অধীনে তিন-চার দিন ধরে প্রতিদিন গড়ে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৯৭ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদনকেন্দ্র থেকে সরবরাহ পাওয়া গেছে ৬০ থেকে ৬৫ মেগাওয়াট করে। 

নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) মাধ্যমে নওগাঁ ও সান্তাহার পৌরসভা এলাকাসহ নওগাঁ সদর ও বদলগাছী উপজেলার কিছু অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

নেসকোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তিন-চার দিন ধরে নওগাঁয় নেসকোর গ্রাহকদের বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১১ মেগাওয়াট। কিন্তু বিদ্যুতের সরবরাহ পাওয়া গেছে পাঁচ থেকে ছয় মেগাওয়াট। এ কারণে নওগাঁ পৌরসভাসহ বেশ কিছু এলাকায় দিনে-রাতে অর্ধেক সময়ই লোডশেডিং করতে হয়েছে।

নওগাঁ পৌরসভার উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘গতকাল বুধবার আমার নতুন বাড়ির ছাদ ঢালাইয়ের কাজ ছিল। লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যাপক বিড়ম্বনায় পড়েছিলাম। সকাল ৯টার দিকে ঢালাই কাজ শুরু হওয়ার পর অন্তত চারবার লোডশেডিংয়ের কারণে প্রায় তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। বিদ্যুৎ না থাকায় ওই তিন ঘণ্টা ঢালাই কাজও বন্ধ ছিল। এর ফলে যে কাজ দুপুর ২টার মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল, সেই কাজ শেষ হয়েছে বিকেল ৫টায়। শীতকালে এত লোডশেডিং কোনোদিন দেখিনি।’

নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁপানিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও একটি গভীর নলকূপের চালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘বোরো আবাদের জন্য জমি তৈরি করা শুরু হয়েছে। জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য দুই সপ্তাহ ধরে ২৪ ঘণ্টাই সেচপাম্প চালু রাখতে হয়েছে। কিন্তু গত তিন-চার দিন ধরে দিনে ছয়-সাত ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে সেচ পাম্প চালাতে সমস্যা হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এবার কৃষকের বোরো আবাদ ব্যাহত হতে পারে।’

গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে কথা হয় সদর উপজেলার বর্ষাইল এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘টিউবওয়েল (গভীর নলকূপ) থেকে দুই বিঘা জমিত জাবার (সেচ) দিতে চার ঘণ্টা লাগিছে। সকাল ৮টা থেকে জাবার শুরু হইছে—এর মধ্যে দুইবার কারেন্ট গ্যাছে। কারেন্ট না গ্যালে দেড় ঘণ্টার মধ্যেই জাবার শ্যাষ হয়ে য্যাত।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে ১১টি উপজেলায় এক লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ১২ শতাংশ জমিতে ধানের চারা লাগানো হয়েছে।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু হোসেন বলেন, ‘জেলার কিছু কিছু এলাকায় কৃষকরা ইতোমধ্যে বোরো ধান লাগানো শুরু করে দিয়েছে। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বোরো ধান লাগানো যাবে। সময় মতো জমিতে সেচ দিতে না পারলে বোরোর ফসল উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। আশা করি, কিছু দিনের মধ্যেই বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অন্যতম প্রধান শর্ত।’

এদিকে, লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যাহত হচ্ছে শিল্পকারখানার উৎপাদনও। জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে চালকলগুলোতে আমন ধান থেকে চাল উৎপাদন করা হয়ে থাকে। জেলায় ছোট-বড় প্রায় এক হাজার ২০০ চালক কল রয়েছে। কয়েকদিন ধরে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে কারখানার উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এভাবে ঘন ঘন লোডশেডিং অব্যাহত থাকলে চাল সরবরাহ ব্যাহত হবে। এতে চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা যেতে পারে।  

নেসকোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মনির হোসেন বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় শীতের মধ্যেও এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং করতে হচ্ছে। ১১ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে পাঁচ থেকে ছয় মেগাওয়াট করে।’

নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১-এর মহাব্যবস্থাপক রবিউল হক বলেন, ‘বিদ্যুতের চাহিদা ৬৩ মেগাওয়াট থাকলেও তিন-চার দিন ধরে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে চাহিদার ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ করে। এ কারণে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিছে, কিছু কারিগরি ত্রুটি ও জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে এই সমস্যা সাময়িক। কিছু দিনের মধ্যেই এটা সমাধান হয়ে যাবে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।’