নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজন ২৬.৫ বিলিয়ন ডলার

Looks like you've blocked notifications!
ছবি : ইউএনবি

নতুন একটি সমীক্ষা বলছে ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৪০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশের প্রয়োজন হবে ২৬ দশমিক পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরের বহুমুখী হলরুমে ‘রিনিউয়েবল এনার্জি ফাইন্যান্সিং, প্রসপেক্টস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য তুলে ধরেন গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ।

চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী ও প্রধান গবেষক জাকির হোসেন খান মূল উপস্থাপনায় বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে প্রায় ৩৮ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এছাড়া ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ছয় দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন পেয়েছে।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক পরিবেশ সুবিধা, গ্লোবাল ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যালায়েন্স, জিসিএফ-পিপিএফ, গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড, গ্লোবাল এনার্জি এফিসিয়েন্সি অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে ক্লিন টেকনোলজি ফান্ডসহ বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থায়ন এসেছে।

তিনি বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৬ লাখ ৮৬ হাজার একর অকৃষি বিশেষ জমি রয়েছে।

এসব অকৃষি জমির পাঁচ শতাংশ ব্যবহার করা গেলে সৌরবিদ্যুৎ বা নবায়নযোগ্য খাত থেকে ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব।

এমনকি শুধুমাত্র চট্টগ্রাম অঞ্চলের খাস জমিতেই ২২ হাজার ৩১৯ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াসেকা আয়শা খান।

এছাড়াও সেমিনারে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সাবেক সচিব ও সাবেক রাষ্ট্রদূত আবুল কালাম আজাদ, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন, পলিসি রিসার্চার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রমুখ।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, সোলার যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক কমানো এখন সময়ের দাবি।

তিনি আরও বলেন, আগামী ১৫ বছরের জন্য এই শুল্ক কমানো উচিত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ্য নির্ধারণ করা উচিত। ভবিষ্যতে কোনো ছাদ খালি রাখা যাবে না।

মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ২০০৯ সালের শেষ দিকে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য প্রায় ৩ শতাংশ সৌরবিদ্যুৎ বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি পরিবর্তন করছি। প্রধানমন্ত্রী চান মোট বিদ্যুতের ৪০ শতাংশ আসবে ক্লিন এনার্জি থেকে। টাকা কোনো সমস্যা নয়।’

তিনি বলেন, উন্নয়ন সহযোগীরা এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ করতে চাইছে। সৌরবিদ্যুৎ প্রযুক্তির দামও কমেছে। ‘সুতরাং সৌর আমাদের পরবর্তী অগ্রাধিকার।’

অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশে গত এক দশকের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ক্লিন এনার্জি এখন তিন শতাংশ।

তিনি বলেন, ‘এটা মোটেও সুখকর নয়। ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে পুরো ইউরোপ এখন বায়ু বিদ্যুতে ঝুঁকেছে।’ বাংলাদেশে তা সম্ভব নয়, তাই আমাদেরকে দ্রুত নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে অগ্রসর হতে হবে।

বর্তমানে চার ধরনের সৌরবিদ্যুৎ যন্ত্রাংশ আমদানিতে ১১ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক রয়েছে এবং এসব শুল্ক কমানো বা সম্পূর্ণ বাতিলের দাবি উঠেছে সেমিনারের একাধিক বক্তার কাছ থেকে।

সুপারিশের মধ্যে রয়েছে আগামী ১০ বছরের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগকারীদের কর ছাড়সহ বিভিন্ন প্রণোদনা প্রদান।

প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি, দ্রুত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ (বিশেষ) আইন বাতিল করা এবং বিনিয়োগকারীদের একটি নির্দিষ্ট হারে অকৃষি খাস জমি পাওয়ার অনুমতি দেয়াও সুপারিশের অন্তর্ভুক্ত।