নাটেশ্বরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দশম-একাদশ শতকের
মুন্সীগঞ্জে রঘুরামপুর ও নাটেশ্বর প্রতাত্ত্বিক খননকাজ পরিদর্শন ও প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর উদ্বোধন করেছেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় সদর উপজেলার রঘুরামপুর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার নাটেশ্বরে পাঁচ মাসব্যাপী খননে যেসব প্রত্নবস্তু মিলেছে, সেসব ঘুরে দেখেন প্রতিমন্ত্রী। প্রায় ১০ একর ঢিবিতে খননকাজ চলছে।
পরে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নাটেশ্বর দেউলে দ্বিতীয় স্তরে এর আগে এবং এবার যে আবিষ্কার হলো, তা পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করে যে, নাটেশ্বর প্রত্নস্থানে ছিল দশম-একাদশ শতকে একটি বৃহৎ এবং সমৃদ্ধ স্তূপ কমপ্লেক্স, যা বাংলাদেশে প্রথম। বিগত বছরের আবিষ্কার যেমন বৃহৎ আকারের নান্দনিক কেন্দ্রীয় অষ্টকোণাকৃতির স্তূপ। এর চারপাশে চারটি স্তূপ হলঘর। প্রতীকী স্থাপত্যগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুটি বৃহৎ আকারের অষ্টকোণাকৃতির স্তূপ, স্মারক কুঠুরি, সুরক্ষা প্রাচীরের অংশ, নকশাকৃত ইট।
অষ্টকোণাকৃতির স্তূপের কেন্দ্রে বিশেষ ধরনের স্থাপত্য 'স্মারক কুঠুরি' একটি দুষ্প্রাপ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কার। যেখানে গৌতম বুদ্ধ বা তাঁর গুরুত্বপূর্ণ শিষ্যের দেহভস্ম, ব্যবহৃত জিনিস রাখা হতো। এর উপরের অংশ গোলাকার ও নিচের অংশ চতুষ্কোণাকৃতি। বাংলাদেশে এ আবিষ্কার প্রথম। স্মারক কুঠুরির গোলাকার অংশ বৌদ্ধ ধর্মের দর্শনের সৃষ্টিতত্ত্ব 'শূন্যবাদ'-এর প্রতীকী রূপ। এ ছাড়া স্তূপের ভেতরের অন্তস্তলটি নির্মিত হয়েছিল স্পোকযুক্ত গাড়ির চাকার আদলে। গোল চাকাই শূন্যের প্রতিরূপ এবং চাকা গতির প্রতীক। উলম্ব ইটের বিন্যাসকে চাকার স্পোকের সঙ্গে তুলনা করা হয়। স্পোককে কল্পনা করা হয় সূর্যের রশ্মির সঙ্গে। এর আগে ইট নির্মিত সুরক্ষা প্রাচীরের অংশবিশেষ পাওয়া গেলেও বিস্তৃতি বুঝা যায়নি। সুরক্ষা প্রাচীরটি স্তূপ কমপ্লেক্সজুড়েই ছিল। এবারের আবিষ্কারে তা অনেকটা পরিষ্কার হয়েছে। পুরো বসতিজুড়ে সুরক্ষা প্রাচীরও বাংলাদেশে এই প্রথম।
এর আগে খননে নকশা আকৃতির ইটের ভাঙা টুকরো পাওয়া গেলেও স্থাপত্যের সঠিক অবস্থানে ইটের নকশা পাওয়া যায়নি। এবার সুরক্ষা প্রাচীরের বহিঃস্থ দেয়ালে একটি হলেও ইটের পূর্ণাঙ্গ নকশা সঠিক অবস্থানে আবিষ্কৃত হয়েছে। খননকালে হতাশার জায়গা ছিল নাটেশ্বরে পোড়ামাটির ফলক না আবিষ্কৃত হওয়া। কিন্তু নকশাকৃত ইটের ব্যবহার বুঝতে পেরে রহস্যটি উন্মোচিত হলো। অতীশের জন্মভূমিতে স্তূপ কমপ্লেক্সের দেয়াল অলংকরণের ক্ষেত্রে পোড়ামাটির ফলকের পরিবর্তে নকশাকৃত ইট ব্যবহৃত হয়েছে, যা গবেষকদের নতুন করে ভাবতে সহায়তা করবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার, পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন, বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা কর্মসূচির 'কর্মসূচি পরিচালক' ড. নূহ-উল-আলম লেনিন, গবেষণা পরিচালক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।