নেত্রকোনায় বলাইশিমুল মাঠ রক্ষায় সুলতানা কামালের সংহতি প্রকাশ
নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার শতবর্ষী বলাইশিমুল সরকারি খেলার মাঠরক্ষা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। আজ শুক্রবার বিকেলে বলাইশিমুল ঈদগাহ মাঠে বলাইশিমুল মাঠরক্ষা গণকমিটি আয়োজিত মহাসমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি সংহতি প্রকাশ করেন।
সুলতানা কামাল বলেন, ‘আপনারা এলাকার শতবর্ষী সরকারি একটি মাঠরক্ষার জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রতিনিয়তই মাঠ রক্ষার কথা, পুকুর, জলাশয় রক্ষার কথা বলে যাচ্ছেন। আমাদের সংবিধানেও এ কথাগুলো উল্লেখ আছে। কিন্তু, মাঠ রক্ষা করতে গিয়ে আপনারা মামলা-হামলাসহ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ লজ্জা প্রকাশ করার কোনো ভাষা আমার জানা নাই।’
সুলতানা কামাল আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি আপনাদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার হবে এবং পুলিশ আর কোনো হয়রানি করবে না। এরপরও যদি হয়রানি করা হয়, তাহলে তা মেনে নেওয়া হবে না।’
এলাকাবাসীর উদ্দেশে সুলতানা কামাল বলেন, ‘আপনারা জনগণের স্বার্থে আন্দোলন করছেন, ব্যক্তি স্বার্থে কিছু করছেন না। তবে, আপনাদের আমি অনুরোধ করব, অন্যায় কিছু করবেন না, বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করবেন না। শান্তিপূর্ণ আপনাদের এ আন্দোলনে আমিও আপনাদের সঙ্গে আছি এবং থাকব।’
নৈতিক এ আন্দোলনের বিজয় সুনিশ্চিত বলেও জানান মন্তব্য করেন সুলতানা কামাল।
বলাইশিমুল মাঠরক্ষা গণকমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান মণ্ডলের সভাপতিত্বে ও আহ্বায়ক আবুল কালাম আল আজাদের পরিচালনায় এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নিজেরা করির নির্বাহী প্রধান খুশী কবির, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দ রিজওয়ানা চৌধুরী, তেঁতুলতলা মাঠরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক সৈয়দা রত্না, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর কবির প্রমুখ।
স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও মাঠরক্ষা গণকমিটির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল সরকারি খেলার মাঠটির এক একর ৮৭ শতাংশ জমি। এরমধ্যে ৭৬ শতাংশ জমি স্থানীয় ব্যক্তিদের দখলে ছিল। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে দখল হওয়া জমি উদ্ধার করা হয়। পরে মাঠের শ্রেণি পরিবর্তন করে ৪৬ শতাংশ জায়গায় ২৩টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এলাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখে পরবর্তী সময়ে মাঠের সৌন্দর্য রক্ষার জন্য জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সেখান থেকে ১১টি ঘর সরিয়ে নিয়ে ১২টি ঘর নির্মাণের কাজ চলে। এরইমধ্যে ঘর ভাঙচুরের ঘটনায় মাঠরক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে একটি এবং কিছুদিন পর আবার ঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আরও একটি মামলা করা হয়।
এদিকে, গত ১৪ আগস্ট হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বলাইশিমুল খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের বিরুদ্ধে করা রিটের শুনানি শেষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ চালানোর ওপর তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ আগস্ট সকাল থেকে উপজেলা প্রশাসন কাজ বন্ধ করে দেয়।