নড়াইলে বীর নিবাস প্রত্যাখ্যান করলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা

Looks like you've blocked notifications!
ছবি : সংগৃহীত

নড়াইলের এক বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের বীর নিবাস প্রত্যাখ্যান করেছেন। একই সঙ্গে এটি নীতিমালা-বহির্ভূত বরাদ্দ দাবি করে, তা বাতিলেরও দাবি করেছেন তিনি।

ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম এস এ বাকি। তাঁর অভিযোগ—বেশ কিছু অসহায় ও গরিব মুক্তিযোদ্ধার পরিবার আবেদন করেও ঘর পায়নি। অথচ, অবস্থা-সম্পন্নেরা বীর নিবাস পেয়েছেন; বীর নিবাস পেয়েছেন বঙ্গবন্ধুর খুনির সমর্থকেরাও।

নড়াইল সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সর্বশেষ কমিটির কমান্ডার এস এ বাকি লিখিতভাবে সদর উপজেলা বীর নিবাস বরাদ্দ কমিটির সভাপতির কাছে এসব অভিযোগ করেছেন।

এস এ বাকি অভিযোগে জানান, দ্বিতীয় পর্যায়ে সদর উপজেলায় ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বীর নিবাস দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে তাঁর নামও রয়েছে। কিন্তু, কয়েকজন অসহায় ও গরিব মুক্তিযোদ্ধা পরিবার রয়েছে, যারা আবেদন করেও ঘর পায়নি। অথচ কয়েক জনকে বীর নিবাস দেওয়া হয়েছে, যাঁরা অবস্থাসম্পন্ন।

এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরদিন সদরের বাঁশগ্রামের আছাদুজ্জামান নামে এক মুক্তিযোদ্ধা নড়াইল শহরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করে বঙ্গবন্ধু পরিবার সম্পর্কে আজেবাজে মন্তব্য করেন। পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুক-রশিদের রাজনৈতিক দল ফ্রিডম পার্টি থেকে দুবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। সেই বিতর্কিত ব্যক্তির নামেও বীর নিবাস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে এস এ বাকি বীরনিবাস প্রত্যাহার করেছেন বলে জানান।

এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে—শহরতলি সিমাখালী এলাকায় উজির আহমেদ খান নামের এক মুক্তিযোদ্ধা প্রথম পর্যায়ে বীর নিবাস পেয়ে, তা ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। আবার হবখালী ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শেখ তিজাব উদ্দীন ও নড়াইল পৌরসভার রঘুনাথপুর এলাকার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা দুলাল চন্দ্র শীল অভিযোগে জানিয়েছেন, ছয় মাস আগে তাঁদের বাড়ির কাজ শুরু হলেও চলছে ধীর গতিতে। বাড়ি নির্মাণে ঠিকাদারদের গতি বাড়াতে তাগাদা দিলেও শুনছেন না তাঁরা।

জানা গেছে, বর্তমান সরকার নড়াইল সদর উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ১১টি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে অসহায় ও গরিব মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০টি বিরনিবাস বরাদ্দ দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত প্রত্যেকটি বাড়িতে আছে ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে তিনটি কক্ষ, দুটি বাথরুম ও একটি করে রান্না ঘর ও বারান্দা।

জানা গেছে, সদরের সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের চুনখোলা গ্রামের হাফিজুল হক, মাইজপাড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা বাহারুল ইসলাম, ভদ্রবিলা ইউনিয়নের রামসিধি গ্রামের মমিনুদ্দীন সিকদার আবেদন করেও বীরনিবাসের বরাদ্দ পাননি। অথচ তাঁরা অসচ্ছল। কিন্তু, সিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান অবস্থাসম্পন্ন জামির হোসেন মিলু, একই ইউনিয়নের তারাপুর গ্রামের নাজমুল হোসেন টুকু, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বর্তমান নড়াইল শহরের স্থায়ী বাসিন্দা অ্যাডভোকেট এস.এ মতিন ও মাইজপাড়া ইউনিয়নের রামেশ্বরপুর গ্রামের ইকলাস মোল্যা বীর নিবাসের বরাদ্দ পেয়েছেন।

বীর নিবাস ভাড়া দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উজির আহমেদ খানের স্ত্রী কথা বলেন। তিনি মুঠোফোনে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ওই বাড়িতে যাই-আসি, থাকি। ওই বাড়ির পাশেই আমার এক আত্মীয় বাড়ি নির্মাণ করবে। সে জন্য ওখানে তিনি সাময়িকভাবে আছেন। কোনো ভাড়ার বিনিময়ে থাকতে দেওয়া হয়নি।’

উজির আহমেদ খানের স্ত্রীর বক্তব্যের পর গত রোববার সকালে ওই বীর নিবাসে গেলে বাড়ির এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমি চাকরি করি। এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না।’

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এস এ বাকি বলেন, বীরনিবাস বরাদ্দ কমিটির সদস্য থাকেন ছয় জন। এ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সদস্য সচিব উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, নড়াইল-১ ও ২ আসনের দুই এমপির দুজন বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার একজন মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি ও উপজেলা প্রকৌশলী। তাঁরা কীভাবে অসহায় ও গরিব মুক্তিযোদ্ধাদের নাম বাদ রেখে অবস্থাসম্পন্ন এবং বিতর্কিত ব্যক্তিদের বীর নিবাসের বরাদ্দ দিলেন, তা বোধগম্য নয়।’

বীর নিবাস বরাদ্দ কমিটির সদস্য ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামানের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে আমরা তাঁর নাম বাদ রাখার পরও বরাদ্দে তাঁর নাম এসেছিল। পরবর্তীকালে বিষয়টি জানার পর চূড়ান্তভাবে তাঁর নাম বাদ দিয়ে হাসান ইমাম নামে এক গরিব বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’

‘মোটামুটি নিরপেক্ষভাবে বীর নিবাস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে’ মন্তব্য করে ওমর ফারুক বলেন, ‘সদরে আরও ৫০টি বীর নিবাস পাস হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সমস্ত মুক্তিযোদ্ধা এই বীর নিবাস পাবেন।’

বীর নিবাস ভাড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বরাদ্দ কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘বীর নিবাস ভাড়া দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, বীর নিবাসে শুধু মুক্তিযোদ্ধার পরিবারই বসবাস করবেন। যাঁরা এসব ঘর ভাড়া দিচ্ছেন, তাঁরা সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ করছেন।’

বীর নিবাস বরাদ্দ কমিটির সভাপতি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলামের কাছে ফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে বলেন, ‘এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর কমিটির সদস্যদের নিয়ে মিটিং করে একটি প্রতিবেদন দিয়েছি। আপনি অফিসে এসে সেটি সংগ্রহ করে নেবেন।’