নড়াইলে শিক্ষকের নির্যাতনে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী হাসপাতালে ভর্তি
নড়াইলে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে পেটে লাথি মেরে ও মারধর করে রাতের আঁধারে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী। বর্তমানে তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গত ৬ মার্চ শনিবার সদর উপজেলার মাইজপাড়া ইউনিয়নের চারিখাদা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
স্বামী শাহান শাহ সরদার এক মাস আগে তাঁর এক ছাত্রীকে বিয়ে করেছেন বলেও অভিযোগ নির্যাতিত ওই অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর। এটি তাঁর তৃতীয় বিয়ে।
জানা গেছে, সদরের মাইজপাড়া ইউনিয়নের চারিখাদা গ্রামের সবদার সরদারের ছেলে মাইজপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক শাহান শাহ সরদার ঢাকার সূত্রাপুর এলাকার আব্দুল কাদিরের মেয়ে ফারজানাকে বিয়ে করেন। তাঁরা তিন সন্তানের জনক-জননী। বড় মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে, মেজো মেয়ে নবম শ্রেণিতে এবং ছোট মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।
চিকিৎসাধীন ফারজানা বেগম জানান, তাঁদের বিয়ের পাঁচ বছর পর তাঁর স্বামী পলি নামের এক মেয়েকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। পরে পরিবার ও তাঁর অনুরোধে দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দেন। এর পর থেকে সংসারে কিছুটা শান্তি ছিল। তবে মাঝেমধ্যেই নারীঘটিত বিভিন্ন অভিযোগ শুনলেও সেগুলো সহ্য করেছেন তিনি। সর্বশেষ এ বছরের ১ ফেব্রুয়ারি মাইজপাড়া ইউনিয়নের কল্যাণখালী গ্রামে তাঁর এক ছাত্রীকে তৃতীয় বিয়ে করেন। গত ৬ মার্চ রাত ৮টায় তৃতীয় স্ত্রীকে বাড়িতে নিয়ে এসে ঘরে তুলতে চান। তখন বাধা দেওয়ায় তাঁর স্বামী শাহানশাহ সরদার, তৃতীয় স্ত্রী মারিয়া ও তাঁর শ্বশুর সবদার সরদার মিলে তাঁর ও তাঁদের মেয়েদের ওপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করেন। তাঁকে কিল ঘুষি, লাথি মারতে থাকেন। তখন তাঁর মেয়েরা ঠেকাতে গেলে তারাও রক্ষা পায়নি। তিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। পেটে লাথি মারায় তাঁর রক্তপাত হয়। নির্যাতনের কারণে তিনি অচেতন হয়ে যান।
চিকিৎসাধীন ফারজানার মেজো মেয়ে জানায়, তার মাকে মারপিটের পর প্রচুর রক্তপাত হয়েছে। তারা তিনবোন অ্যাম্বুলেন্স খবর দিয়ে রাতে মাকে নড়াইল সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। জরুরি বিভাগে চিকিৎসক দেখানোর পর অবস্থা খারাপ হওয়ায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক। তারা তার মাকে রাত ২টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
মেয়ে বলে, ‘এ ঘটনার পর আমাদের ঘরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন আমার বাবা। আমরা এখন কোথায় উঠব, ভেবে পাচ্ছি না। তা ছাড়া নানাভাবে আমাদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। আমার বাবা হলেও তিনি অপরাধী। এ পর্যন্ত আমার বাবার দ্বারা অন্তত ২৫ জন নারী কলঙ্কিত হয়েছে। আমরা সঠিক বিচার চাই।’
শিক্ষক শাহান শাহ সরদারের মোবাইল নম্বরে ফোন করে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি প্রথম পক্ষের স্ত্রীর সঙ্গে কোনো ঝামেলা হয়নি বলে জানান। পরে তাঁর স্ত্রী এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন—এমন প্রশ্ন করলে তিনি ফোন কেটে দেন। পরে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।
এ ব্যাপারে সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মফিজুল ইসলাম এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘মৌখিকভাবে শুনেছি। তবে লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। তার পরও ঘটনাটির খোঁজ-খবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’