‘পঁচা’ ফলে সংসার ভাল চলে বিলকিসের
বিলকিস আক্তার (৩৮)। রাজধানীর সদরঘাটের বাদামতলীতে ‘পঁচা’ ফল বিক্রি করে সংসার চালান। প্রতিদিন ফল বিক্রি করে পরিবারের সদস্যদের আহার জোগাড় করেন বিলকিস। লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি। অল্প বয়সে অভাবের তাড়নায় তাঁকে এ পেশা বেছে নিতে হয়েছে। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে বিলকিস চতুর্থ। অভাবের কারণে কিশোরী বয়সেই বাধ্য হয়ে তাঁকে ধরতে হয়েছিল সংসারের হাল।
গতকাল বুধবার রাজধানীর সদরঘাটের বাদামতলীতে গিয়ে দেখা গেছে, ময়লা-আবর্জনার পাশে ছোট ছোট টুকরির মধ্যে ফল নিয়ে বসেছেন বিলকিস। অনেক ফলের কিছু অংশ কাটা। মানে, এসব ফলের পঁচা অংশ ফেলে দেওয়া হয়েছে। বিলকিস অনেক দিনের পুরান ও আধা-পঁচা ফলও কম দামে বিক্রি করছেন। এখানে শুধু বিলকিস নয়। আরো অনেকেই এই ব্যবসা করেন।
বিলকিস এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বিশ বছর ধরে তিনি এই ‘পঁচা’ ফলের ব্যবসা করেন। তিনি ও তাঁর স্বামী দুজনে মিলে এই ব্যবসা করেন। প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাভ হয়। এদিয়ে সংসার মোটামুটি চলে যায়।
‘আগে ব্যবসা ভালো ছিলো। কিন্তু এখন আর আগের মতো না। পাইকারিতে মালের দাম বাড়ছে। ফলে বিক্রি কমে গেছে। সকালে বাদামতলীর পাইকারী দোকান উঠার পরেই ব্যবসা শুরু করি। বাদামতলীর হকার, শ্রমিক, লঞ্চযাত্রী এমনকি ভিখারিরাও আমাদের থেকে ফল কিনে নেয়।’
বাদামতলীর আড়ত থেকে ‘পঁচা’ ও নরম ফল প্রতি পাল্লা (পাঁচ কেজি) চারশ টাকায় কেনেন বলে জানান বিলকিস। ফল থেকে পঁচা অংশ ছুরি দিয়ে কেটে ফেলে দেন। বাকিগুলো একশ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারেন।
যে জায়গাটিতে বসেন সেটি নিয়ে অভিযোগ করেন বিলকিস। কারণ, এর পাশেই ময়লার ভাগাড়। এ কারণে ব্যবসা কম হয়। বিলকিস আরো বলেন, ‘তিন মাস আগে পুলিশ আমাদের কাছ থেকে সপ্তাহে সপ্তাহে টাকা নিতো। কিন্তু এখন আর পুলিশ টাকা নেয় না।’
বিলকিসের সঙ্গে কথা বলার সময় কায়সার নামের এক ক্রেতা ফল কিনতে আসেন। তিনি সদরঘাটে শ্রমিকের কাজ করেন। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বিকেলে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে প্রায়ই এখান থেকে ফল কিনে নিয়ে যান।
ভালো ফল থাকতে পঁচা ফল কিনছেন কেন- এমন প্রশ্নে বিলকিস এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বাইরে ফলের অনেক দাম। আমরার মতো গরিব মানুষ এইতা কিনতে পারে না। এখানে দাম কম। এগুলান বাইচা বাইচা কিনে বাসায় নেই।’
রোজিনা নামের আরেক ক্রেতা বলেন, সন্ধ্যা ৭টায় তিনি লঞ্চে করে বরিশাল যাবেন। বাদামতলীতে ফলের দাম কম হওয়ায় তিনি বাড়িতে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক