পাপুলের স্ত্রী-কন্যার জামিন জালিয়াতি : তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
কুয়েতে কারাবন্দি লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী-কন্যার নথি জালিয়াতি করে জামিন নেওয়ার ঘটনার তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী দুই মাসের মধ্যে এই তদন্ত সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।
দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। জামিন আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোতাহার হোসেন সাজু এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।
খুরশীদ আলম বলেন, আগাম জামিন আবেদনে নথি জালিয়াতির অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। দুই মাসের মধ্যে দুদক সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম ও তাঁর মেয়ে ওয়াফা ইসলাম এবং তদবিরকারক হাফেজ আহমেদসহ সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রতিবেদন দেবেন।
দুই কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ এবং ১৪৮ কোটি টাকার অর্থ পাচারের অভিযোগে শহিদ ইসলাম পাপুল ও তাঁর স্ত্রী, কন্যা ও শ্যালিকার বিরুদ্ধে গতবছর ১১ নভেম্বর মামলা করে দুদক। এ মামলায় গত বছর ২৬ নভেম্বর তারা হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন।
এর মধ্যে পাপুলের স্ত্রী ও মেয়ের আবেদনের শুনানি নিয়ে তাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। তবে তাঁদের আবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নথি জমা দেওয়া হয়। যেখানে বলা হয়, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের একটি শাখায় হিসাবে অর্থ পাচারের সংঘটিত হতে পারে মর্মে প্রতীয়মান হয়নি।
বিষয়টি আদালতের নজরে আসায় ওই নথিতে স্বাক্ষরকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক মো. আরেফিন আহসান মিঞাকে তলব করে সুয়োমোটো রুল জারি করেন হাইকোর্ট। তিনি হাজির হয়ে বলেন, এ নথি টেম্পার্ড হয়েছে। তবে পাপুলের স্ত্রী-কন্যার আইনজীবীর দাবি, এই নথি এনআরবি ব্যাংক তাদের সরবরাহ করেছে। এরপর আদালত এনআরবি ব্যাংকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। গত ১২ জানুয়ারি এনআরবি ব্যাংক জানায়, তারা এ ধরনের নথি দেয়নি। এরপর আদালত এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সব নথি তলব করেন। এ আদেশ অনুসারে বাংলাদেশ ব্যাংক নথি দাখিল করেন।
নথি উপস্থাপন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী আদালতে বলেন, জামিন আবেদনে দেওয়া নথির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নথির মিল নেই। জামিন আবেদনে যা দাখিল করা হয়েছে তা জালিয়াতি হয়েছে। এর সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তার তদন্ত হওয়া দরকার।
শুনানিতে জামিন আবেদনকারীর আইনজীবীও বলেন, ওই নথি যদি জালিয়াতি হয়ে থাকে তবে এর সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তা তদন্ত হওয়া দরকার। শুনানি শেষে আদালত ১১ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন। সে অনুসারে আজ বৃহস্পতিবার রায় দেন হাইকোর্ট।
গত বছর ৬ জুন কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) শহিদ ইসলাম পাপুলকে কুয়েতে গ্রেপ্তার করে। কুয়েত সিআইডি পাপুলের বিরুদ্ধে সেখানে মানবপাচার ও অর্থপাচারের মামলা করেছে। সে মামলায় চার বছরের সাজা জয় পাপুলের। তিনি এখন কুয়েতে কারাবন্দি।