পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৫ বছর : পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা দ্রুত সমাধানের দাবি
পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাঙামাটিতে আজ শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙামাটি জেলা শাখাসহ বিভিন্ন সংগঠন দিনটিতে নানা কর্মসূচি পালন করেন। সেখান থেকে বক্তারা তাদের নানা দাবি তুলে ধরে বক্তব্য দেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা দ্রুত সমাধানের দাবি জানান বিশিষ্টজনেরা।
সাবেক সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ঊষাতন তালুকদার বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা রাজনৈতিক সমস্যা; এটি রাজনৈতিক ভাবেই সমাধান করতে হবে। তবে, সরকার এটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে চুক্তি বাস্তবায়নে বিলম্ব করছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙামাটি জেলা শাখার উদ্যোগে এক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঊষাতন এসব কথা বলেন। রাঙামাটি জিমনেশিয়াম প্রাঙ্গণে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
ঊষাতন তালুকদার বলেন, ‘আমাদেরকে বারবার আওয়ামী লীগের মুখোমুখি করা হচ্ছে, কিন্তু আমরা বলতে চাই আওয়ামী লীগ আমাদের শত্রু নয়, বন্ধু। তবে, আমাদের দাবি-অধিকার আদায়ে আমরা আন্দোলন, সংগ্রাম চালিয়ে যাব।’
ঊষাতন তালুকদার আরও বলেন, ‘সরকার বলছে ৪৮টি ধারা বাস্তবায়ন হয়েছে, সেটা তো বহু বছর ধরে বলছেন। বাকি ধারাগুলো কবে বাস্তবায়ন করবে সরকার?’
সাবেক সংসদ সদস্য বলেন, ‘সন্তু লারমাকে আপনারা এখন চাঁদাবাজ বলছেন, তখন কেন চুক্তি করলেন? সন্তু লারমা দেশপ্রেমিক বলেই তিনি এখনও সব কিছু মেনে নিচ্ছেন। সরকারকে সব সময় সহযোগিতা করছেন।’
‘জুম্ম জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সুদৃঢ় করুন’ এই শ্লোগানে আয়োজিত গণসমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির রাঙামাটি জেলা কমিটির সভাপতি গঙ্গা মানিক চাকমার সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য অঞ্চলের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, এমএন লারমা মোমিরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেমন চাকমা, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সহসভাপতি ভবতোষ দেওয়ান, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মনি চাকমা, যুব সমিতি রাঙামাটি জেলা কমিটির সভাপতি অমিতাভ তঞ্চঙ্গ্যা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুমন মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধরণ সম্পাদক শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা বক্তব্য রাখেন।
গণসমাবেশ বক্তারা বলেন, ‘পাহাড়ে ভূমি, আইনশৃঙ্খলা, প্রশাসন এবং অভ্যন্তরীণ ও প্রত্যাগত উদ্বাস্তু পুনর্বাসন হয়নি। সরকারের মধ্যে একটি অংশ চুক্তি বিরোধিকাতার স্বার্থ সংরক্ষণ করছে। চুক্তি বাস্তবায়নে যত দেরি হবে, দলবাজি ও চাঁদাবাজি তত বাড়বে। নতুন নতুন দলও গজিয়ে উঠবে।’
ভূমি কমিশনের প্রবিধান না হওয়ার ভূমি কমিশন কোনো কাজ করতে পারছে না উল্লেখ করে বক্তারা আরও বলেন, ‘চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আমাদের আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আন্দোলন সংগ্রাম ছাড় চুক্তি বাস্তবায়ন সম্ভব না।’
চুক্তি বাস্তবায়নে তাই জুম্ম জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয় গণসমাবেশ থেকে।
এদিকে পার্বত্য শান্তি চুক্তি রজত জয়ন্তী উপলক্ষে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে শহরে একটি শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। আজ শুক্রবার দুপুরে কলেজ গেইট এলাকা থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে আলোচনা সভায় যোগ দেয়। আলোচনা সভা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার।
এ ছাড়া পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাঙামাটি রিজিয়ন ও সেনা জোনের উদ্যোগে শান্তি র্যালি ও মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়। শুক্রবার সকালে শহরের কলেজ মাঠে কবুতর ও বেলুন উড়িয়ে শান্তিচুক্তির বর্ষপূর্তির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
পরে কলেজ মাঠ থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। সেনা রিজিয়নের মাঠে শোভাযাত্রাটি শেষ হয়।
শোভাযাত্রা শেষে সেনা রিজিয়ন প্রান্তিক মাঠে মানবিক সহায়তার মধ্যে ঢেউটিন, সেলাই মেশিন, সিলিং ফ্যান ও দুস্থ ব্যক্তিবর্গকে এক লাখ টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়।
শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমতাজ উদ্দিন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী, রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ, সদর জোন কমান্ডার লে. কমান্ডার আশিকুর রহমান প্রমুখ।