পায়রা বন্দরের ভূমি অধিগ্রহণ : ছয় রাখাইন পরিবার পেল ক্ষতিপূরণ
দীর্ঘ আন্দোলনের পর অবশেষে পায়রা বন্দরের অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণের অর্থ পেলেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ছয়টি রাখাইন পরিবার। জমির ঘরবাড়ি ও গাছপালার ক্ষতিপূরণ বাবদ আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার ছআনি পাড়ার রাখাইন সম্প্রদায়ের ছয়টি পরিবারের মধ্যে এই অর্থ বিতরণ করা হয়।
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন তাঁর কার্যালয়ে এসব পরিবারের সদস্যদের মধ্যে টাকার চেক হস্তান্তর করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জি এম সরফরাজ, জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা আল এমরান প্রমুখ।
যারা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন তারা হলেন ইয়াংসি মাতুব্বর, চিংদামো রাখাইন, মংমাচিন রাখাইন, লাবঅং মাতুব্বর, মংচো রাখাইন ও লাচিংমো।
ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝে পাওয়ার পরে ছআনি পাড়ার মাতুব্বর চিংদামো রাখাইন জানান, তাঁরা তাদের বসতবাড়ি ছেড়ে যাচ্ছেন। রাখাইনরা উপজেলার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের রাখাইন অধ্যুষিত ছোটবালিয়াতলী এলাকায় পুর্নবাসন হতে চান। এতে তাঁরা নিজেদের কৃষ্টি ও ধর্মীয় রীতিনীতি সুষ্ঠুভাবে উদযাপন করতে পারবেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘পায়রা বন্দরের অনুকূলে ছআনি পাড়ার জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এতে পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষ রাখাইনদের পরিবারগুলোকে যথাযথ পুনর্বাসন করবে। আপাতত এই ছয়টি পরিবারকে কলাপাড়া উপজেলা শহরের ভাড়া বাড়িতে রাখা হবে এবং পরবর্তীতে তাদের চাহিদামাফিক পুনর্বাসন সাইট নির্মাণ শেষে সেখানে স্থানান্তর করা হবে।’
জেলার কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নে ছআনিপাড়া গ্রামটির গোড়াপত্তন হয়েছিল ১৭৮৪ সালে। তখন কয়েকশ পরিবারের বসবাস ছিল এখানে। কালের বিবর্তনে এখন মাত্র ছয়টি পরিবার অবশিষ্ট আছে। যেসব পরিবারে মোট ১৮ জন পুরুষ, ১০ জন নারী ও দুই শিশুসহ মোট বাসিন্দা ৩০ জন।
পায়রা বন্দরের উন্নয়ন কাজের জন্য পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন গোটা গ্রামটি অর্থাৎ সাড়ে পাঁচ একর জমি অধিগ্রহণ করে। গ্রামের রয়েছে একটি রাখাইন মন্দির। এ মন্দিরের সেবাইত হিসেবে রয়েছে এই ছয় পরিবারের লোকজন। রাখাইন রীতি অনুযায়ী, এসব সেবাইত জমির মালিক নন। তারা শুধু জমির অস্থাবর সম্পদ ঘর-বাড়ি ও গাছপালার মালিক। জেলা প্রশাসন এই ছয় পরিবারের অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য বাবদ টাকা পরিশোধ করেছে।
১৯৪৮ সালে পটুয়াখালীতে ১৪৪টি ও বরগুনায় ৯৩টি রাখাইনপাড়া ছিল, বর্তমানে সেখানে যথাক্রমে ২৬টি ও ১৩টি পাড়া টিকে আছে।
পায়রা বন্দরের রাখাইনদের জমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদে সেখানকার ৫০টি পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন করে আসছিল। অবশেষে নবাগত জেলা প্রশাসক এবং এলএও শাখা কর্মকর্তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধের সূচনা হলো।