পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজিস্টদের নার্সের নিবন্ধন না দেওয়ার দাবি
এসএসসি পাস করে ছয় মাস থেকে বিভিন্ন মেয়াদের কোর্সে পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজি কোর্স করা শিক্ষার্থীদের ‘নার্স’ হিসেবে নিবন্ধন না দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন ‘স্টুডেন্ট নার্সেস অ্যান্ড মিডওয়াইফস’ সম্মিলিত পরিষদের নার্সিং কোর্সের শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে তাদের পরীক্ষা যথা সময়ে নেওয়ারও দাবি জানানো হয়।
আজ শনিবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশ স্টুডেন্ট নার্সেস অ্যান্ড মিডওয়াইফস সম্মিলিত পরিষদের ব্যানারে চার বছর মেয়াদি বিএসসি ও তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্সের হাজারো শিক্ষার্থী আন্দোলনে অংশ নেন।
আন্দোলনে যোগ দেওয়া চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইন নার্সিং, ডিপ্লোমা ইন নার্সিং ও ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারির শিক্ষার্থীরা দাবি জানান, পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজির শিক্ষার্থীরা এসএসসি পাস করে ছয় মাস থেকে বিভিন্ন মেয়াদে কোর্স করেন। তাদের নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। কিন্তু তারা এসএসসি পাস করে চার বয়র মেয়াদি বিএসসি ও তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স করা শিক্ষার্থীদের সমমান সনদ দাবি করছে। এ জন্য তাদের নিবন্ধন না দেওয়ার জন্য আমরা আন্দোলনে নেমেছি।
আন্দোলনরত রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী ইমরাতুল জান্নাত এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বিভিন্ন মেয়াদি পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল কর্তৃক স্বীকৃত নার্সিং শিক্ষার কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা এইচএসসি পাস করে চার বছর মেয়াদি নার্সিং কলেজে পড়ছি। হাজার হাজার শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষায় পড়ার সুযোগ পেয়েও সেবা খাতে থাকার জন্য পড়াশুনা করছে। কিন্তু এ অবস্থায় এসএসসি পাস করে যারা ছয় মাসসহ বিভিন্ন মেয়াদে কোর্স করেছে তাদেরকেও আমাদের সমমানের মান দেওয়া হচ্ছে। এটি দুঃখজনক। তাহলে এত কষ্ট করে চার মেয়াদি কোর্স রাখার দরকার কী?’
একই কলেজের আন্দোলনরত অপর শিক্ষার্থী হানিফা কারিম ফাল্গুনী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন ২০১৬ এর ২৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী নার্সিং কাউন্সিলের অনুমোদন ব্যতীত কোনো প্রতিষ্ঠানে নার্সিং কোর্স পরিচালনা করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এই আইনের ২৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী নার্সিং কাউন্সিলের নিবন্ধন ব্যতীত কোনো ব্যক্তি নিজেকে নার্স পরিচয় দিতে পারবেন না। পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজি কোর্স সম্পন্নকারীদের নার্স বলাও এই আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।’
বাংলাদেশ স্টুডেন্ট নার্সেস অ্যান্ড মিডওয়াইফস সম্মিলিত পরিষদের আহ্বায়ক ইমরানুল হক হিমেল বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেওয়া পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজি কোর্স সম্পন্নকারীদের নার্সিংয়ের নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের আনুরোধ জানাই। তাদের ডিপ্লোমা ইন পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজি নামে নিবন্ধন দেওয়া হোক।’
হিমেল আরো বলেন, নার্সিং পেশার সঙ্গে তাদের কোর্স কারিকুলাম সাংঘর্ষিক হওয়া সত্ত্বেও কিছু ষড়যন্ত্রকারী রাতারাতি নিজেদের নার্স হিসেবে দাবি করে বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল থেকে সার্টিফিকেট চাইছে। অথচ এসএসসি, এইচএসসি বিজ্ঞান বিভাগসহ পাস করে নার্সিং পেশায় আসতে হয়। তিনি আরো বলেন, জাতীয় সংসদ থেকে প্রণীত নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন ২০১৬ অনুযায়ী বাংলাদেশ ও বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নার্সিং শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন দেওয়ার একমাত্র ক্ষমতা রাখে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল (বিএনএমসি)।
গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি নার্সদের আন্দোলনের মুখে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে নার্সিং ও টেকনোলজি কোর্স বাতিল করে দেওয়া হয়। তবে চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি ডিপ্লোমা ইন পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজি কোর্সের শিক্ষার্থীদের নার্সিংয়ের নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে ২০১১ সালে নার্সদের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তার পদমর্যাদা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে নার্সিং পেশায় শিক্ষার মান প্রসারে নার্সিং কলেজ, জাতীয় নার্সিং গবেষণা প্রতিষ্ঠান (নিয়ানার) নার্সিং অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে অধ্যয়ন গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন পাওয়ার কোনো যোগ্যতা ও যুক্তি না থাকার কারণগুলো তুলে ধরেন। সেগুলো হলো:
জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি স্বতন্ত্র পেশা হিসেবে বেঙ্গল নার্সিং কাউন্সিল ১৯৩৪, পরবর্তীতে পাকিস্তান নার্সিং কাউন্সিল অ্যাক্ট ১৯৫২, পরবর্তীতে বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল অর্ডিন্যান্স–১৯৮৩ ও বর্তমানে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন-২০১৬ দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন প্যাশেন্ট কেয়ার টেকনোলজিস্টরা কখনোই নার্স হিসেবে নিবন্ধন/লাইসেন্স দাবি করতে পারে না।
বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল ডিপ্লোমা স্টুডেন্ট ভর্তির ক্ষেত্রে এইচএসসি ব্যাকগ্রাউন্ড, জিপিএ, বয়স, সেশন, জেলা কোটা ও পুরুষ-মহিলা কোটা বিবেচনা করলেও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ক্ষেত্রে এর কোনোটাই মানা হয় না, শুধু এসএসসি পাসের যেকোনো বয়সের যে কেউ তাদের পরিচালিত কোর্সে ভর্তি হতে পারে।
বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের ক্ষেত্রে মেডিকেল স্টুডেন্টসদের মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নার্সিং স্টুডেন্ট ভর্তির ব্যবস্থা থাকলেও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ক্ষেত্রে তা নাই। বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের অধিভুক্ত সব প্রতিষ্ঠান নার্সিং, শিক্ষকমণ্ডলী দিয়ে পরিচালিত হলেও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ক্ষেত্রে তা হয় না।
বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের কোর্সের নাম ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি হলেও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ক্ষেত্রে এ নামে কোনো কোর্স নাই বিধায় একই নামে নিবন্ধন প্রাপ্তির দাবি অলৌক্তিক।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড আইন অনুযায়ী পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজি নামে, নার্স হিসেবে নিবন্ধন দেওয়ার সুযোগ নাই। বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল ভর্তির শুরু থেকেই ছাত্র/ছাত্রীদের রেজিস্ট্রেশন করলেও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড তা করে না।
ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের প্রথম বর্ষ থেকেই হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিস (ব্যবহারিক শিক্ষা) গ্রহণ করতে হয় যা বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নীতিমালা, আইন বা গেজেটে নাই। জনগণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রোধ করতে এবং নার্সিং শিক্ষা ও সার্ভিসের মান অক্ষুন্ন রাখতে বাংলাদেশ নার্সিং মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের নিবন্ধিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নার্সিং কোর্স সম্পন্নকারী ব্যতীত কোনো শিক্ষার্থীকে নার্স হিসেবে নিবন্ধন দেওয়া যাবে না।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি ব্যাচেলর অব নার্সিং সায়েন্স, ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি, ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি ছাত্র-ছাত্রীদের নির্ধারিত কম্প্রিহেনসিভ লাইসেন্সিং পরীক্ষার স্থগিতাদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহার করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কম্প্রিহেনসিভ লাইসেন্সিং পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।