ফাঁসি দেওয়ার আগে অন্তত ১০ বার চিন্তা করি : প্রধান বিচারপতি
যে কোনো মামলায় আসামিকে সর্বোচ্চ দণ্ড ফাঁসি দেওয়ার আগে অন্তত ১০ বার চিন্তা করেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। আজ বুধবার আপিল বিভাগে এক মামলার শুনানিতে এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি।
এ সময় প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, আপিল বিভাগে সব আপিল একসঙ্গে শুনানি না হওয়ার অন্যতম কারণ ডিজিটাল না হওয়া। সেদিন আসামির ফাঁসি হয়ে গেছে বলেও আপিল বিভাগকে ভুল বোঝানো হয়েছে।
এ ছাড়া আদালত আরও বলেন, ঝড়ু ও মোকিমের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার দায়, আপিল বিভাগের ওপর আসা বিব্রতকর। ফাঁসি কার্যকরের বিষয়ে সঠিক তথ্য না জেনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করায় ক্ষমা চেয়েছেন আইনজীবী।
শুনানির একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, এই কোর্টের ওপর এমন একটা ব্লেইম (অভিযোগ) আসে। এটা বিরাট বিব্রতকর কোর্টের জন্য। আমরা প্রত্যেকটা ফাঁসি দেওয়ার আগে ভালো করে দেখি। ফাঁসি দেওয়ার আগে আমরা কম করে হলেও ১০ বার চিন্তা করি।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আসিফ হাসান বলেন, আমাদের এই ক্ষেত্রে একটু চাওয়া হলো—আমাদের হয়তো আরও সতর্ক হতে হবে। এ বিষয়ে একটা গাইডলাইন দিলে ভালো হয়।
এরপর আদালত ওই দুই আসামির নিয়মিত আপিল অকার্যকর বলে খারিজ করে দেন। পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ বিষয়ে গাইডলাইন থাকবে বলে জানিয়ে দেন আদালত।
১৯৯৪ সালের ২৮ জুন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. মনোয়ার হোসেন খুন হন। ওই ঘটনায় তার চাচাতো ভাই মো. অহিমউদ্দিন বাদী হয়ে ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার এজাহারে মোকিম ও ঝড়ুর নাম আসে। পরে ২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল এ মামলার বিচারে তিনজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ, দুইজনকে যাবজ্জীবন ও অপর আসামিদের খালাস দেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-২। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন— একই ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, মোকিম ও ঝড়ু।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর নিয়ম অনুসারে আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য মামলাটি হাইকোর্টে আসে। মামলার ডেথ রেফারেন্স নম্বর ছিল ৩৯/২০০৮। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট মোকিম ও ঝড়ুর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে ২০১৩ সালের ৭ জুলাই ও ৮ জুলাই মামলার রায় ঘোষণা করেন। বাকি আসামিদের খালাস দেন হাইকোর্ট।
পরে মোকিম (আপিল নং- ১১১/২০১৩) ও ঝড়ু (আপিল নং- ১০৭/২০১৩) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল (জেল আপিল ও নিয়মিত আপিল) দায়ের করেন। তবে নিয়ম অনুসারে দুটি আপিল একসঙ্গে ট্যাগ না হওয়ায় শুধু জেল আপিল নিষ্পত্তি করে ২০১৭ সালে দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তবে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রায় চার বছর পর অপর মামলাটি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় উঠলে আপিল নিষ্পত্তির আগেই দুই আসামিকে ফাঁসি দেওয়া নিয়ে আলোচনা ওঠে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
তবে ওই দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি বলে ৪ নভেম্বর জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তিনি জানিয়েছেন, তাদের যে জেল আপিল ছিল, তা সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্টে শুনানি হয়ে ২০১৬ সালে ডিসমিসড হলো। এরপর রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণভিক্ষার আবেদন করলেন, সেটিও ডিসমিসড হলো। আপিল এবং প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হওয়ার পরে স্বাভাবিকভাবে দণ্ড কার্যকর করা হলো। কিন্তু আইনজীবীর উচিত ছিল, জেল আপিলের সঙ্গে নিয়মিত আপিল ট্যাগ করে উপস্থাপন করা। তাহলে এ সমস্যা হতো না।