বঙ্গবন্ধুর প্রথম শাহাদাতবার্ষিকী পালন করে কারাভোগ করেছিলেন তাঁরা

Looks like you've blocked notifications!
ভৈরবে ১৯৭৬ সালের ১৫ আগস্ট গ্রেপ্তার হওয়া ২২ জনের মধ্যে ১৮ জন। ছবি : সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় ১৯৭৬ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম শাহাদাতবার্ষিকী পালন করায় গ্রেপ্তার হয়ে পুলিশি নির্যাতনসহ কারাভোগ করেছিলেন তৎকালীন যুবলীগ-ছাত্রলীগের ২২ নেতাকর্মী। তাঁদের মধ্যে বর্তমানে জীবিত রয়েছেন ১৬ জন। সেদিনের সেই সাহসিকতার কথা স্মরণ করে তাঁরা স্মৃতিকাতর হলেও, স্থানীয়ভাবে দলীয় বা প্রশাসনিক কোথাও নেই তাঁদের আলাদা কদর।

সেদিন যাঁরা কারাভোগ করেছিলেন তাঁরা হলেন—ফখরুল আলম আক্কাছ, আসাদুজ্জামান ফারুক, রুহুল আমিন, মতিউর রহমান, মফিজুর রহমান, জজ মিয়া, জিল্লুর রহমান জিল্লু, মাহাবুব আলম, আসাদ মিয়া, ফিরোজ মিয়া, আতাউর রহমান, ফজলুর রহমান, আসাদুল হক শিশু, আজমল ভূঁইয়া, শাহজালাল হোসেন, সুবল চন্দ্র কর, দীলিপ চন্দ্র সাহা, দ্বিজেন্দ্র চন্দ্র সাহা, রসরাজ সাহা, আবদুল হামিদ, ইদ্রিস মিয়া ও মাহবুব মিয়া।

জানা গেছে, ১৯৭৬ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর প্রথম শাহাদাতবার্ষিকী পালনের উদ্যোগ নেন ভৈরবের তৎকালীন যুবলীগনেতা ফখরুল আলম আক্কাছ। এ বিষয়ে তিনি স্থানীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে গোপনে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ আগস্ট গোপনে হাজী আসমত কলেজের নিউ হোস্টেলে মিলাদ, দোয়া ও কোরআন খতমের আয়োজন করা হয়। এদিন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ১০ থেকে ১২ জন মৌলভী উপস্থিত হয়ে কোরআন খতম শুরু করেন। আর একজন একজন করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের ২২ জন নেতাকর্মী বিকেল ৪টার দিকে কলেজের নিউ হোস্টেলে উপস্থিত হন। ওই সময় হঠাৎ করে ৩০ থেকে ৪০ জন পুলিশ নিউ হোস্টেলটি ঘেরাও করে ফেলেন।

হোস্টেলটি ছিল দোতলায়। পুলিশ রুমে ঢুকেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে রাইফেলের বাট দিয়ে ফখরুল আলম আক্কাছকে এবং সবাইকে লাঠিপেটা শুরু করে। পরে আটক সবাইকে থানার হাজতখানায় রাখলেও মৌলভীদের মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়।

পরদিন থানাহাজত থেকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকাদেশ দিয়ে তৎকালীন মহকুমা আদালত, কিশোরগঞ্জে চালান দেওয়া হয় ২২ জনকে। সেদিন তাঁদের কোমড়ে রশি বেঁধে ট্রেনে করে আদালতে পাঠানো হয়। পরে আদালতে তাঁদের জামিন চাইলে বিচারক জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠান। তারপর তাঁরা দীর্ঘ কয়েকমাস কারাভোগ করার পর জেল থেকে ছাড়া পান।

এ বিষয়ে ফখরুল আলম আক্কাছ বলেন, ‘আমরা সেদিন অসীম সাহস নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রথম শাহাদাতবার্ষিকী পালনের আয়োজন করেছিলাম। সেদিন এদেশে কোথাও বঙ্গবন্ধুর প্রথম শাহাদাতবার্ষিকী পালন হয়েছিল কিনা আমার জানা নেই। আমরা ভাবতেও পারেনি মিলাদ-দোয়ার জন্য গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাভোগ করতে হবে।’