বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি : ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া
‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। সেই স্বাধীনতা অর্জনের অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা জাতির পিতাকে হারিয়ে ছিলাম। ফলে আমরা বঙ্গবন্ধুর সেবা থেকে, ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছি।’
এনটিভি অনলাইনকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
বিপ্লব বড়ুয়া ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের খুসাঙ্গের পাড়ার মাস্টারবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা অ্যাডভোকেট সুনীল বড়ুয়া, মা অমিয় প্রবা বড়ুয়া। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যয়ন করেন। ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
ছাত্রজীবন শেষে বিপ্লব বড়ুয়া সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হন। পেশাগত জীবনে দৈনিক মুক্তকণ্ঠ ও দৈনিক আজাদীর স্টাফ রিপোর্টার এবং বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের প্রকাশনা কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রযোজক (বার্তা) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
বিপ্লব বড়ুয়া ২০০৬ সালে ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী উলভারহ্যাম্পটন ইউনির্ভাসিটি থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এলএলবি (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ২০০৭ সালে লন্ডনের সিটি ল’স্কুলে বিশ্বখ্যাত ইনস্ অব কোর্ট স্কুল অব ল (আইসিএসএল) থেকে বার ভোকেশনাল কোর্স (বিভিসি) সম্পন্ন করেন। একই বছরের ২৬ জুলাই যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে পুরোনো ‘দ্য অনারেবল সোসাইটি অব গ্রেস ইন’ কল টু দ্য বার বিপ্লব বড়ুয়াকে বার অ্যাট-ল ডিগ্রি (ব্যারিস্টার) প্রদান করে।
জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এনটিভি অনলাইন বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ বিশেষ সাক্ষাৎকারের ষষ্ঠ পর্বে কথা বলেছেন ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন এনটিভি অনলাইনের স্টাফ করেসপনডেন্ট ফখরুল শাহীন।
এনটিভি অনলাইন : স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষ উদযাপন করছে বাংলাদেশ। আজকের এই দিনে দাঁড়িয়ে একজন তরুণ রাজনীতিবিদ হিসেবে বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া : আমি মনে করি আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান মানুষ এই মুহূর্তে। কারণ ইতিহাসের দুটি প্রধান ঘটনা, বাঙালি জাতির নির্মাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি। একজন বাঙালি হিসেবে, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা তা প্রত্যক্ষ করছি। এটি বড় সৌভাগ্যের বিষয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ অভিন্ন সত্ত্বা এবং কালের ইতিহাস এটি নির্ধারণ করেছে। আজকে এমন একটি সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছে যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁরই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী বাঙালি জাতির কাছে মানুষের কাছে একটি নতুন আহ্বান নিয়ে এসেছে। আমাদের উপলব্ধির কাছে, চেতনার কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নতুন করে যেন জেগে উঠেছেন।
আমরা যে বাংলাদেশ দেখছি, সেটা অত্যন্ত গর্বের। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ করেছি। বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
পৃথিবীর বড় গণমাধ্যম জাতিসংঘসহ বিভিন্ন বড় প্রতিষ্ঠান বলছে, বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি মনে করি, আজকে স্বাধীন বাংলাদেশের মুজিব বর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও নবতর যে অধ্যায়ের সূচনা করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা—সব কিছু মিলিয়েই নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশ দেশপ্রেমের একটি বোধ একটি উপলব্ধির সৃষ্টি করবে—এটি হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া।
এনটিভি অনলাইন : জাতির পিতার সোনার বাংলা বাস্তবায়ন …
ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং অত্যন্ত বেদনার বিষয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন দেশে মাত্র এক হাজার ৩১৪ দিন সরকার পরিচালনার সুযোগ পেয়েছেন। এবং বিশ্বাসঘাতকরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কাল রাতে জাতির পিতাসহ পরিবারের সব সদস্যকে অত্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করে। আজকে স্বাধীন বাংলাদেশের বয়স ৫০ বছর। আজকে যদি বলি, স্বাধীন বাংলাদেশের কতটা বছর জাতির পিতার নীতি ও আদর্শ নিয়ে পরিচালিত হয়েছে। আমরা যদি আজকে আত্মজিজ্ঞাসা করি, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ কতটা দিন মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে পরিচালিত হয়েছে? তাহলে আমরা দেখতে পাই, এ ৫০ বছরের বাংলাদেশে মাত্র জাতির পিতার নীতি ও আদর্শের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনা করেছে মাত্র দুই দশক ২০টি বছর। আর ৩০টি বছর স্বাধীনতার পরাশক্তি, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, স্বৈরতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক অগতান্ত্রিক সরকার এই রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। আজকে তাদের কারণেই স্বাধীন বাংলাদেশের যে অভিপ্রায়, যে আকাঙ্ক্ষা, যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মূল্যবোধ—যার আলোকে বাংলাদেশ পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু এই তিনটি দশক স্বৈরতান্ত্রিক অগণতান্ত্রিক সরকারগুলোর কারণেই স্বাধীন বাংলাদেশে একটি পাকিস্তানি ভাবধারার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। এবং সেভাবেই বাংলাদেশ পরিচালিত হয়েছে। আজকে বাঙালি জাতি যতটুকু অর্জন করেছে, তার সবটুকু এসেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আজকে যে বিশ্ব সভায় বাঙালি জাতি মর্যাদায় পরিণত হয়েছে। এর অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার কারণে। আমাদের যা কিছু অর্জন, সেগুলো এসেছে এই দুই দশকে।
এনটিভি অনলাইন : আপনি এই দেশকে কোথায় দেখতে চান?
ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া : স্বাধীন বাংলাদেশে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বড় হয়েছে মিথ্যা ইতিহাস জেনে। জাতির পিতা আমাদের লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার জন্য চেষ্টা করেছেন সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে আমাদের সে পরিকল্পনা ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। আজকে আমাদের হারিয়ে যাওয়া সেই স্বপ্নকে বঙ্গবন্ধুকন্যা সামনে নিয়ে এসেছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমরা আমাদের উন্নয়ন থেকে দূরে চলে গিয়েছিলাম। শেখ হাসিনা নেতৃত্বে উন্নয়নের ধারা আবারও বেগবান হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সর্বদাই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। নতুন করে ডিজিটাল বাংলাদেশ, রূপকল্প ২০৪১, ডেল্টা প্লান, ব দ্বীপ প্লান বাঙালি জাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন এবং সে লক্ষ্যমাত্রাকে নির্দিষ্ট করেই বাঙালি জাতি আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ।
আমি বাঙালি জাতির কাছে, বাংলাদেশের মানুষের কাছে; এ দেশের একজন নাগরিক হিসেবে প্রত্যাশা করব—তারা সবাই জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে।