বড় নেতাদের নোংরা রাজনীতি শোভা পায় না : আইভী

Looks like you've blocked notifications!
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ১০৩তম জন্মদিন ও শিশু দিবস উপলক্ষে আলোচনা ও কেক কাটা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। ছবি : এনটিভি

এ কে এম শামীম ওসমানকে উদ্দেশ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছে ‘বড় নেতাদের এমন নোংরা রাজনীতি করা শোভা পায় না’। আজ শুক্রবার (১৭ মার্চ) সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ১০৩তম জন্মদিন ও শিশু দিবস উপলক্ষে আলোচনা ও কেক কাটা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।’

নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে আইভী বলেন, ‘নোংরা রাজনীতি করে ধাপ্পাবাজি করা, কারও পিছে কাউকে লাগিয়ে দেওয়া যায়। নারায়ণগঞ্জের মানুষের জন্য এত সুন্দর বিল্ডিং করেছি— এটা কারও কারও মনে হয় সহ্য হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত আর কিছু পেল না, আমার সুইপারদের নিয়ে রাজনীতি করা হলো? ছিঃ কী নোংরা রাজনীতি। এ রকম বড় নেতাদের নোংরা রাজনীতি করা শোভা পায় না।’

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাইয়ের সভাপতিতে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সদস্য হোসনেয়ারা বাবলিসহ অনেকেই।

আইভী বলেন, ‘১৯৮১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রথম সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল নারায়ণগঞ্জে। তখন আমার বাবা আলী আহমদ চুনকা ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগ, শহর আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট এবং নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান। উনি যখন শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দিলেন, চাষাঢ়ার বালুর মাঠে ঠিক ওই দিন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে সামনে (তৎকালীন পৌরসভা) যেভাবে ময়লা ফেলেছিল ঠিক তেমনভাবে কতিপয় নেতা ঢাকা ফতুল্লা রোডের মধ্যে ময়লা ফেলে দিয়েছিল। তখন আমার বাবা আলী আহমদ চুনকা দাঁড়িয়ে থেকে সুইপার দিয়ে পরিষ্কার করে তারপর সংবর্ধনা দেন। সেই সংবর্ধনার মধ্যে কী হয়েছিল নারায়ণগঞ্জবাসী তার ইতিহাস জানে। ফরিদ ও জন্য গ্রুপ এবং জেলা জাহাঙ্গীর গ্রুপদের মধ্যে স্টেজের মধ্যে কী পারফারমেন্স ছিল, সে পারফরমেন্সে পরিপ্রেক্ষিতে যা ঘটেছিল—তা জানি।’

শামীম ওসমানকে উদ্দেশ করে মেয়র আরও বলেন, ‘আমি চাই না, সেই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি নারায়ণগঞ্জে ঘটুক। আমি সাবধান করে দিতে চাই। নোংরামি করবেন? নোংরামির জবাব আমি নোংরামিভাবে দিতে পারব না। কিন্তু আমি ভদ্রভাবে আপনাকে দিতে পারব। আমি এত নিচে নামতে পারব না আপনার মতো। আমার পারিবারিক শিক্ষা এত নিচে নামার নয়। কিন্তু জবাব প্রস্তুত আছে। ইতোমধ্যে বন্দর থেকে মাইক্রোবাস, হুণ্ডা বাহিনীকে এলাকাবাসী সাধারণত জনগণ প্রতিহত করেছে। সে ভূমিদস্যদের সময় কিন্তু এখন চলে এসেছে। আমাদের কিছু বলতে হবে না, আমার কাজ হলো এই শহরের মানুষদের সাহস দেওয়া, শহরের মানুষকে জাগিয়ে তোলা। আমি নারায়ণগঞ্জের মানুষের পাশে আছি। আজকে যারা ৫০ থেকে ৬০ বছর ধরে এই শহরে জমিদারি করছে ওই জমিদারদের অবসান ঘটাতে চাই। ওই সম্রাজ্যের অবসান ঘটাতে চাই। শুরু হয়ে গেছে। জনগণ শুরু করেছে।’

আইভী শামীম ওসমানের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘নৌকা নিয়ে রাজনীতি করতে পারব না কিন্তু আপনার নোংরামির জবাব দিতে পারব সাহসিকতার সঙ্গে। আমি ১৯৮১ সালের পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। আমি কোনো অবস্থাতে চাই না, এই ধরনের সিচুয়েশন সৃষ্টি হোক। কিন্তু মনে রাখবেন, যদি উত্তপ্ত করতে চান—ছাড় দেওয়া হবে না। বাড়াবাড়ি ভালো নয়। জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের কথা বলি, উন্নয়ন করতে দেন। সব কাজে বাধা দিছেন, মানি নাই। বাধা প্রতিহত করব। কিন্তু এ রকম নোংরামি বরদাস্ত করা হবে না।’

শামীম ওসমানকে উদ্দেশ করে আইভী আরও বলেন, ‘আপনি জাতীয় সংসদের সদস্য। আইন পাস করেন, বিশৃঙ্খলা করেন আবার আপনিই। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আর নিচে নামায়েন না। আপনাদের ফ্যামিলির প্রশংসা করেন দেখে মনে কইরেন না হাতির পাঁচ পা দেখে ফেলেছেন। প্রশংসা কেন করেন সেটা বোঝার চেষ্টা করেন, সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করেন। আপনার পূর্বপুরুষের জন্য সম্মান করে। সুতরাং মানুষের কাতারে আসেন, বিভক্তি বন্ধ করেন—চেলা-চামুণ্ডারা যারা শিখিয়ে দেয়, সেই চেলা চামুণ্ডাদেরও থামতে বলেন। না থামলে বন্দর নবীগঞ্জে যেভাবে প্রতিহত হয়েছে—আমার মনে হয় নারায়ণগঞ্জবাসীও সেভাবে পারবে।’

নারায়ণগঞ্জবাসীকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে আইভী বলেন, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করো, সম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ভালোবাসো বঙ্গবন্ধুকে এবং এগিয়ে যাও কর্ম উদ্দীপনাতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। প্রধানমন্ত্রী ৬৪ জেলায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর যে উন্নয়নের বার্তা, তা গ্রুপ করে করে মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিতে হবে। সামনের বছর নির্বাচন। নির্বাচনি বছর এলে অসম্ভবভাবে ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে যায়, বহির্বিশ্বে ষড়যন্ত্র, আন্তর্জাতিক, দেশি ষড়যন্ত্র চলে। ডান, বাম অনেকেই একসঙ্গে হয়ে কীভাবে সরকারকে নামানো যায় সেই চিন্তা করা শুরু করে দেয়। এগুলোকে প্রতিহত করতে হলে নিজেদের মানুষের কাছে যেতে হবে। মানুষকে বুঝাতে হবে প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের জন্য কী কী উন্নয়ন করেছেন।’